চন্দননগরের ফরাসি আমলের স্থাপত্য এখন কী অবস্থায় আছে
অবহেলাতেই পড়ে বেসরকারি স্থাপত্য, রক্ষণাবেক্ষণ নেই গোরস্থানেও
- Total Shares
ছোট্ট এক শহর, সেই শহরের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে আছে ফরাসি স্থাপত্য আর ভাস্কর্যের নিদর্শন। সব না হলেও বেশিরভাগ নিদর্শনই খুব সুন্দর ভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়। কারণ এ ব্যাপারে ভারত সরকারের কাছ থেকে পাকা কথা নিয়েই ফরাসিরা চন্দননগরে তাদের উপনিবেশ ছেড়েছিল। যেগুলি সরকারি বদান্যতায় তৈরি মূলত সেগুলিই বেশ ভালো ভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়ে থাকে। যেমন গভর্নরস হাউস।
চন্দননগর বললে প্রথমেই যে জায়গাটির কথা মনে পড়ে, তা হল দুপ্লের বাড়ি, এখন জাদুঘর ও ফরাসি ভাষা শিক্ষা কেন্দ্র। এই শহরে কারও সঙ্গে দেখা হলে ফরাসি ভাষায় আর সম্বোধন করেন না বটে, তবে ফরাসি ভাষা-চর্চা এখনও এই শহরে হয়, নিয়মিত ও নিরবচ্ছিন্ন ভাবে। ফরাসি গভর্নরের বাড়িটিই দুপ্লের বাড়ি বলে পরিচিত, এখন তার নাম চন্দননগর মিউজিয়াম অ্যান্ড ইনস্টিটিউট। এই বাড়িটি সুন্দর ভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়ে আসছে।
চন্দননগর মিউজিয়াম অ্যান্ড ইনস্টিটিউট
এই সৌধের সামনে দিয়ে চলে গেছে বাঁধানো পিচ ঢালা সুন্দর রাস্তা, তা পার করলেই বাঁধানো গঙ্গার পাড়। সেখানেও রয়েছে ফরাসি স্থাপত্যের নিদর্শন। ঘাটের লেখাটি দূরবীণ দিয়ে দেখলে দেখা যাবে, সবই লেখা রয়েছে ফরাসি ভাষায়।
গঙ্গার পাড়ে ফরাসি স্থাপত্যের নিদর্শন
ফরাসি ভাস্কর্য দেখতে হলে অবশ্য যেতে হবে গোরস্থানে। চন্দননগরে ফরাসি সমাধিক্ষেত্রে যেন ইতিহাসের দলিল। কারা এখানে থাকতেন, কারা এখানে চিরনিদ্রায় নিদ্রিত...। অবহেলা আর অযত্নের ছাপ আছে অবশ্যই, তবে আর যা আছে তা ইতিহাসের আকর। বিশ্ব ঐতিহ্য সপ্তাহেও একই ভাবে রয়ে গেল এই জায়গা।
ইতিহাসের আরেক সাক্ষী চন্দনগরের বারাসতের তোরণ। চন্দননগরের প্রবেশ পথও বলা যেতে পারে। এটি এখনও খুব সুন্দর ভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়ে থাকে। ভারতে যখন ব্রিটিশ রাজ চলছে তখন চন্দননগর ছিল ফরাসি শাসনাধীন। তাই ব্রিটিশ পুলিশ তাড়া করলে এই তোরন পার করে ফলতে পারলেই নিরাপদ... তখনই অন্তত ধরপাকড় শুরু হবে না, কারণ সেটা অন্য দেশের জায়গির।
নৃত্যগোপাল স্মৃতিমন্দির, রক্ষণাবেক্ষণ কেমন তা ছবিতেই স্পষ্ট
কানাইলাল বিদ্যামন্দিরে গেলে ফরাসি স্থাপত্যের সত্যিকারের পরিচয় জানা যাবে। কাঠের সিঁড়ি বেয়ে ওঠার সময় সামগ্রিক ভাবে সেই সময়ের ইউরোপীয় স্থাপত্যের সঙ্গেও পরিচয় ঘটবে। এই স্কুলে এখনও ফরাসি ভাষা শেখানো হয়।
এখানে যে চার্চটি রয়েছে সেটিতেও রয়েছে ফরাসি স্থাপত্য। চন্দননগরে যাঁরা আসেন তাঁরা সকলেই পবিত্রহৃদয় উপাসনাস্থলটি দেখে যান। লোকে দেখেন গঙ্গার তীরে পাতালবাড়িটিও। ওতেল দে লা পারি নামে যে রেস্তরাঁটি ছিল, সেই ভবনে এখন আদালত বসে।
চন্দননগর সিমেট্রি
চন্দননগরের বেশ কয়েকটি বসতবাড়িতেও রয়েছে ইউরোপীয় শিল্পকলার নিদর্শন। বাড়িগুলি বাইরে থেকে দেখা যায়, অনুমতি পেলে ভিতরে ঢুকলে বোঝা যাবে ইউরোপীয় শিল্পকলার কতটা ছাপ সেখানে রয়েছে।