এবার অন্তত সরকারের মুঠো থেকে বের হোক কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসব
চলচ্চিত্র উৎসবের অর্থ শুধুমাত্র গ্ল্যামার নয়, তারও বেশি কিছু
- Total Shares
এ কথা তো ঠিকই যে বাম জমানাতেই কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসবের সূচনা এবং আন্তর্জাতিক পালকটিও যোগ হয় সেই সময়েই। তবে এ দেশে চলচ্চিত্র উৎসবের শুরুয়াত নেহরুর আমলে। কেন্দ্রীয় সরকারের বদান্যতায় আরম্ভ হয়ে আজও চলছে, এখন অবশ্য তা গোয়ার ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল অব ইন্ডিয়া বা ইফি।
নন্দন তৈরির পর কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসব তো এক কথায় বাম সরকারের কাছে একটা রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ হয়ে গিয়েছিল। ওরা করলে আমরাই বা নয় কেন! অতএব বাম সরকারের উদ্যোগে যে ফিল্মোৎসব শুরু হয়েছিল তা অতি সত্বর দাদার উৎসবে পরিণত হয়ে যায়। কিন্তু তারপর? রাজ্যপাটে যে রকমটাই হোক না কেন পরিবর্তন তো একটা ঘটল। কিন্তু ফিল্মোৎসবের সেই ভ্রান্তিবিলাস সেটার কি কোনও রদবদল হল? এ কথা বলা নিশ্চয় বাহুল্য হবে না যে ঘটনার পুনরাবৃত্তি এখন একাধিক পর্বের ধারাবাহিক হয়ে উঠেছে।
নেতাজি ইন্ডোরে তারকা সমাবেশ
পরিবর্তনের বছররেই আমরা চমক দেখেছিলাম। জনতার উৎসব বলে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জনমানসে ফিল্ম উৎসব বিষয়টিকে খুব সফল ভাবেই প্রচার করেছিলেন এবং সেটা সত্যি একটা নজির হয়ে উঠেছিল। হাজার হাজার মানুষ নেতাজি ইন্ডোরে; তা কি কেবলমাত্র শাহরুখ খানের জন্য? টিভির সামনে বসেও তো হাজার হাজার দর্শক উদ্বোধনী অনুষ্ঠান দেখেছেন। সেটাও কি শাহরুখ কলকাতায় তা দেখার জন্য?
চেনা দৃশ্য: কলকাতা চলচ্চিত্র উসবের উদ্বোধনে অমিতাভ বচ্চন ও শাহ রুখ খানের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (ফাইল চিত্র/পিটিআই)
নন্দন-রবীন্দ্রসদন-শিশির মঞ্চ চত্বরে সাধারন মানুষের ভিড়। বাংলা ছবির প্রযোজক, পরিচালক, কলাকুশলীদের ব্যস্ত চলাফেরা। ছবি শুরুর আগে-পরে টলিউড পাড়ার মানুষজন, স্বল্পদৈর্ঘ্যের ছবি, তথ্যচিত্র এমনকি নানা ধরনের আলোচনা সভাতেও তাঁদের সক্রিয়তা, সব মিলিয়েই উল্লেখ করার মতোই ঘটনা। ফলত দিদি তথাকথিত ফিল্ম বোদ্ধাদের একচেটিয়া উৎসবকে রাতারাতি জনতার উৎসব নামে অভিহিত করতে একশো শতাংশই সফল হয়েছিলেন। কিন্তু কী ভাবে?
সিনেমা উৎসব জনগণের উৎসব
আসলে শাহরুখ, তাঁর জুটি কাজল, জুহি প্রমুখ থেকে শুরু করে অমিতাভ বচ্চন-সহ আরও বহু তারকাখচিত উদ্বোধন মঞ্চের কারণেই কেবল ইন্ডোরে হাজার হাজার মানুষের ভিড় – তা কিন্তু নয়। জনতার উৎসব বা পার্বন বলেই যে নন্দন আঙিনায় সাধারণ মানুষের চোখ-মুখ, বাংলা চলচ্চিত্র দুনিয়ার কলাকুশলীদের সক্রিয় অংশগ্রহণ – তাও নয়। তাহলে মোদ্দা বিষয়টা কী?
শাহরুখ, অমিতাভ এবং অন্য সব আকর্ষণের প্রতি উৎসাহ ছাড়াও জনমানসে সম্পূর্ণ ভিন্ন এক প্রতিক্রিয়াও ঘটে। জনমন প্রাথমিক ভাবে সহ্য করে গেলেও দীর্ঘকালের অবজ্ঞা-অবহেলা-ঔদ্ধত্যের প্রতি একটা সময় অসন্তোষ প্রকাশ করে, ক্ষোভ উগরে দেয়। নন্দন নিছক একটি প্রেক্ষাগৃহ বা সিনেমা-হল। অথচ সেটিকে বাম জমানায় কেবলমাত্র বিশেষ বুদ্ধিবিশিষ্ট মানুষজনের ব্যক্তিগত সম্পত্তি করে ব্যবহার করা হত। ওয়্যারলেস-ভ্যান, হুটার, পুলিশ, স্তাবক বেষ্টিত আঙিনায় সচরাচর সাধারণ মানুষ যেতে ইতস্তত করতেন। যে কোনও সময়ে পুলিশ এবং শাসক দলের লোকজন রূঢ় ভঙ্গিতে বলে উঠত, ‘সরে যান। সি এম আসছেন।’
নন্দন তখন হয়ে গিয়েছিল ক্ষমতার দ্বিতীয় পীঠস্থান। নেতাজি ইন্ডোরে উদ্বোধন যেমন নিছক ভেনু বদল নয়, তেমনই হাজার হাজার মানুষের উপচে পড়া ভিড়কে আদেখলেপনা ভাবা কিংবা জনগনের উৎসব আখ্যা দেওয়াটা কেবল ভুল নয় তাঁদের ক্ষোভ-বিক্ষোভ-প্রতিবাদকে ছোট করে দেখা, হেয় করা। কারণ মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী স্থান বদল করে, তারকাখচিত উদ্বোধনে ভিড় জমিয়ে রাজনৈতিক চালে মাত করছেন সেকথা যেমন ঠিক পাশপাশি জনগনের ভিড়ও যে নিঃশব্দ বিপ্লব সে কথাও মানতে হবে। তা না হলে ক্ষমতার প্রতীক গুঁড়িয়ে যেতে পারে না।
উৎসবও কি ক্ষমতার প্রতীক
সেই ক্ষমতার অবসান ঘটল, অনেক মানুষের জন্য স্থান বদল হল। সিনেমা বোদ্ধাদের উৎসব সবার হল, গিরিশ মঞ্চ বা মধুসূদন মঞ্চের মতো সরকারি হল বাতিল হল, মাল্টিপ্লেক্স তুরস্ক, আজারবাইজান বা চিলির ছবি দেখাতে শুরু করল। বেসরকারি হলও সরকারি পৃষ্ঠপোষণায় সিনেমা উৎসবে অংশ নিল।
কিন্তু এখনও চলচ্চিত্র উৎসব থেকে রাজ্য সরকারের নিয়ন্ত্রণ গুটিয়ে নেওয়ার সময় এল না।
এমনিতেই কোনও সিনেমা-উৎসব সরকারি উদ্যোগে হওয়ার কথা নয়। কান, বার্লিন, ভেনিস, টরন্টো থেকে বুসান কোথাও হয়ও না। পাড়ার দোকানে বার্গম্যান, কুরোসাওয়ার ডিভিডিগুলিতে ধুলো জমেছে। ঘরে বসে ‘টরেন্ট’ থেকে বিদেশি ছবি ডাউনলোডিং। ‘ইউটিভি ওয়ার্ল্ড মুভিজ’ চ্যানেলে লাতিন আমেরিকা, ইউরোপ, এশিয়ার ছবি- এই বাজারেও সরকারি ফিল্মোৎসব কেন? আসল কথা ক্ষমতা। আর সব কিছুর মতো উৎসব, ছবি দেখানোর মধ্যেও এক ধরণের ক্ষমতা থাকে, সেটা কি হাতছাড়া করা যায়?
কেন এমন অদ্ভুত সিদ্ধান্ত
ফিল্মোৎসব আসলে রাজনীতির একটা ছক। সেই ছকেই সরকারের হাতে নন্দন, ফিল্মোৎসব, টেকনিশিয়ান্স স্টুডিয়ো, কলাকুশলীদের ইউনিয়ন, রুগ্ণ-ভগ্ন কালার ল্যাব রূপায়ণ, চলচ্চিত্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রূপকলা, শহরে অগুনতি বন্ধ সিনেমা হল। কিন্তু টেকনিশিয়ান্স স্টুডিয়ো, কলাকুশলীদের ইউনিয়ান, নন্দন, ফিল্মোৎসব নিয়েই সরকারের কাজ কারবার। আর ভাল সিনেমা, চলচ্চিত্রশিক্ষার প্রসার, বন্ধ সিনেমা হল, তার দায়-দায়িত্ব?
সিনেমা উৎসবের জন্য সরকারের কমিটি তৈরি করে দেওয়ার দরকার আছে কি? অভিনেতা, প্রযোজক, পরিচালক, কলাকুশলী, ফিল্ম সোসাইটি, ফিল্ম স্কুল, ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট সংস্থা, বিজ্ঞাপন সংস্থা মিলে তৈরি করলে ক্ষতি কোথায়। কী ছবি দেখানো হবে, কোথা থেকে টাকা আসবে সে দায়ও নিক তারা। পরিবেশকদের থাকাটা খুব দরকার। একটা ছবি পুরস্কার পেলে একটি সংস্থা তার প্রদর্শন-স্বত্ব কিনতে পারে। উৎসবের বিভিন্ন বিভাগের জন্য স্পনসর খোঁজা যেতে পারে। স্পনসরদের অনুদানে তো নাট্যোৎসব হয়। কলকাতা ফিল্মোৎসবের স্পনসর পাবে না?
গোয়ায় চলচ্চিত্র উৎসবের সূচনা হয়েছিল জওহরলাল নেহরুর সময়ে (ফাইল চিত্র)
সরকারি নিয়ন্ত্রণ থেকে বেরিয়ে বাণিজ্যের রাস্তা খুঁজলে উৎসবের মান খুব কমে যাবে? ভাঁড়ে মা ভবানী সরকার কেন কয়েক কোটি টাকা উৎসবে ঢালবে। সরকার পানীয় জল, পরিষ্কার রাস্তা থেকে দমকল, পুলিশ প্রভৃতি পরিষেবা দিক। বহু বিদেশি আসেন, পরিষেবা দিয়ে রাজ্য সরকার রাজস্ব আদায় করুক। বাংলা ছবি, আঞ্চলিক ছবিকে তুলে ধরা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের উদ্দেশ্য কি, নাকি সারা বিশ্বে হালফিলে যেসব চলচ্চিত্র তৈরি হচ্ছে, যা আলোচিত হচ্ছে বিশ্বজুড়ে, সেগুলো নিয়ে নিজেদের আরও ঋদ্ধ করাটা লক্ষ্য।
বাংলা ছবিকে প্রচারে আনার জন্য আলাদা করে বাংলা চলচ্চিত্রের উৎসব করলেই তো হয়! না কি আমার হাতে মঞ্চ আছে বলেই গুণমানের তোয়াক্কা করব না। বাংলা ছবির প্রদর্শনী করিয়ে বিশ্বের কাছে আদৌ মুখ উজ্জ্বল করব। কিন্তু তা হয় কি? যেখানে অন্যান্য আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে বাংলা ছবি নির্বাচিত হয় কালেভদ্রে৷ সে ছবি দর্শক-সমালোচকদের কাছে সমাদৃত হওয়া, বা উৎসবের প্রতিযোগিতা বিভাগে পুরস্কৃত হওয়ার ঘটনা আরও বহু যোজন দূরের ব্যাপার! তা হলে কেন এমন অদ্ভুত সিদ্ধান্ত?
সংকুচিত হচ্ছে আসল উদ্দেশ্য
সরকারের আদব কায়দাকে বাংলা চলচ্চিত্র শিল্পের সঙ্গে যুক্ত অনেকেই অবশ্য সাধু বলছেন। তাঁদের কথা শুনে মনে হচ্ছে, এর ফলে বাংলা ছবি যেন অচিরেই ‘জগৎসভায় শ্রেষ্ঠ আসন লবে’!
কিন্তু শ্রেষ্ঠত্বের দাবিদার হতে গেলে, আন্তর্জাতিক পরিচিতি পেতে গেলে যে অন্তত আন্তর্জাতিক মানের সমকক্ষ হতে হয়, সেই প্রাথমিক শর্তটা তাঁরা যেন বুঝেও না বোঝার ভান করছেন৷ ভালো ছবি বানাতে গেলে যে চর্চা, যে নিবিড় অনুশীলনের প্রয়োজন, গত এক দশকে বাংলার চলচ্চিত্র চর্চায় তার ছাপ কোথায়, সে প্রশ্নও এঁদের কারেও মাথায় আসছে না৷ সারা বিশ্বে এখন যে ধরনের ছবি তৈরি হচ্ছে, আধুনিক বাংলা ছবির একটাও সেই সব ছবির ধারেকাছে যেতে পারবে কিনা, সেই সমীক্ষাও হচ্ছে না৷ উল্টে, নিজের শহরে চলচ্চিত্র উৎসবে ভালো ছবি দেখার সুযোগ ক্রমশই সঙ্কুচিত হয়ে আসছে।
নিয়মিত উৎসবে ছবি দেখতেন, এমন অনেকেই উৎসাহ হারিয়েছেন৷ সিনেমা সবার জন্য সেটা শুনতে ভালো লাগে কিন্তু ভালো জিনিসটা শেখার কী হবে! কী ভাবে হবে, যদি আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব তার আন্তর্জাতিক দৃষ্টিভঙ্গীটাই হারিয়ে ফেলে? যদি তাঁর বিশ্ববীক্ষা না থাকে!
রাজনীতি ও সংস্কৃতির সস্তা পাচন
সস্তায় হাততালি কুড়োবার চটকদারি রাজনীতি ও সংস্কৃতি কেবল বাংলায় নয় সর্বত্র, সর্বস্তরে এবং সবকালেই ছিল আছে। পরিবর্তন জমানার কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান তেমন আর নতুন কি! আগামী বছর কলকাতা আন্তুর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের রজত জয়ন্তী। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান সল্টলেক স্টেডিয়ামে হতে পারে।
একটা সময় ছিল, যখন কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসবে সব ধরনের বাণিজ্যিকতা সযত্নে এড়িয়ে যাওয়া হত। সেই সময় কোন ছবি উৎসবে দেখানো হবে, সেটাও ঠিক হত উচ্চবর্গীয় উন্নাসিক মানসিকতা নিয়ে। সাধারণ চলচ্চিত্রপ্রেমীরা তার নাগাল পেল কি না, খেয়াল রাখার প্রয়োজন পড়ত না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পৌরহিত্য অনেক কিছুই নতুন চালু হয়েছে। কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসবের ভোল বদলেছে। খুব সচেতন প্রচেষ্টাতেই এই উৎসবকে আমজনতার বিনোদন করে তোলার চেষ্টা হয়েছে। ছবি বাছাইয়ের মাপকাঠি বদলেছে৷ মূল ধারার বাণিজ্যিক সিনেমার লোকজনেরা এখন উদ্যোগের সামনের সারিতে।
কলতাকা চলচ্চিত্র উৎসবের উদ্বোধন (ছবি: ফেসবুক)
গড়পড়তা দর্শকের কাছে অপরিচিত ল্যাটিন আমেরিকা কিংবা মধ্যপ্রাচ্যের অন্য ধারার সিনেমার পরিচালকের বদলে আমআদমির নয়নমনিরা এখন উদ্ধোধনী মঞ্চ থেকে শুরু করে প্রায় সমস্ত জায়গায় মুখ্যমন্ত্রীর আমন্ত্রণেই। কিন্তু প্রতিদিন পোলাও বা বিরিয়ানি খেলে যেমন অতৃপ্তি-অরুচি হয় তেমনই প্রতিবার কলকাতার চলচ্চিত্র উৎসবে মহাতারকাদের বিশেষত অমিতাভ-শাহরুখের উপস্থিতিও ঔজ্জ্বল্য হারিয়েছে। তাদের কথাবার্তাও স্রেফ ভাঁড়ামোতে পরিণত হয়েছে। সে তাঁরা যত বড় সুপারস্টার হন আর পাবলিক তাঁদের দেখে যতই হইহই করে উঠুক। কারণ যে পাবলিকদের আপনি চটকদারি রাজনীতি এবং সংস্কৃতির পাচন গিলিয়ে বাজিমাত করতে চাইছেন সেই পাবলিকের মনেই কিন্তু প্রশ্নটা আসবেই যে চলচ্চিত্রের কোন সুমহান উৎকর্ষের সন্ধান দিচ্ছে ওই তারকা সমাবেশ!
বাড়ছে নিন্দুকদের গলার জোড়
একটা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব করার লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য কী? অন্তত তারকা সমাবেশ কিম্বা আমজনতার হইহই তো নয়, অথবা উদ্ধোধনী ছবি থেকে শুরু করে গণ্ডায় গণ্ডায় নতুন পুরনো বাংলা বাণিজ্যিক ছবি দেখানোও নয়। তাহলে? বাংলা ছবির কলাকুশলীরা উৎসবের উদ্যোগে আয়োজনে সামনের সারিতে চলে এসেছেন, সেই সব চলচ্চিত্র বোদ্ধাদের ভাগানো গিয়েছে, তারা আর এ মুখো হয় না, এখন সব অন্য মুখ- এগুলিই চলচ্চিত্র উৎসবের সার্থকতা? নাকি বাম জমানার একনিষ্ঠরা এক এক করে যেমন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় প্রমুখ ফের এই উৎসবের আঙিনায় হাজির- এগুলি চলচ্চিত্র উৎসবের সফলতা?
মুখ্যমন্ত্রীর গোটা মুখে তৃপ্তির হাসি। উৎসবের প্রচারে যতকিছু মাধ্যম ব্যবহৃত হয়েছে সেখানেও তাঁর হাসিভরা মুখ। গোটা উৎসবের সর্বত্র যেন কেবল তিনি। তাঁর হাসি শ্লাঘার- যেন করে দেখিয়ে দিলাম কী ভাবে এই মাগ্গিগণ্ডার বাজারে এক হাতে গান লিখে, লোগো ডিজাইন করে, প্রকল্প-পরিকল্পনা থেকে শুরু করে সব কিছু সফল ভাবে করা যায়।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠান নন্দন থেকে নেতাজি ইন্ডোরে সরিয়ে একে আমজনতার উৎসবে পরিণত করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (ফাইল চিত্র/পিটিআই)
উৎসবের উদ্বোধনী বক্তৃতায় পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছন, তাঁর রাজ্যে দার্জিলিং, দীঘা, সুন্দরবন, ইত্যাদি প্রাকৃতিক শোভায় পরিপূর্ণ অনেক জায়গা রয়েছে, যেখানে সিনেমার শ্যুটিং হতে পারে৷ অবশ্যই হতে পারে৷ কিন্তু চলচ্চিত্র তো শুধুই নায়ক, নায়িকা, ভিলেনকে নিয়ে শ্যুটিং নয়, আরও অনেক কিছু৷ চলচ্চিত্র উৎসব মানেও শুধু গ্ল্যামার নয়, তারও বেশি কিছু। এই অনুধাবনের জায়গাটা সম্ভবত তাঁর, তাঁর সংস্কৃতি দপ্তরের, পারিষদবর্গের ভাবা দরকার৷ আর তা না হলে চলচ্চিত্রের সিরিয়াস দর্শকরা বঞ্চিত হবেন, উল্টে গলার জোর বাড়বে নিন্দুকদের।
এই প্রথম! এত বছরে সেটাও তো কেউ করে দেখাতে পারেননি। পাবলিক কিন্তু যুগ যুগান্ত ধরে ধাপ্পা খায় না। তার প্রমাণ পরিবর্তন।