পদে পদে বাধা অতিক্রম করেও ক্লাসিক হয়েছে সত্যজিৎ রায়ের 'গুপীবাঘা'

রাজ কাপুরের শর্ত ছিল গুপী হবেন পৃথীরাজ কাপুর ও বাঘা শশী

 |  2-minute read |   09-05-2018
  • Total Shares

ছোটদের জন্য একটা ছবি করার অনুরোধ প্রথম ন'বছরের পুত্র সানীপ রায়ের কাছ থেকে। ১৯৬২ সালে 'অভিযান' করার সময় থেকেই সত্যজিৎ রায়ের মাথায় গুপী-বাঘকে নিয়ে ছবি করার ভাবনা আসে। ভেবেছিলেন, ১৯৬৩-তে উপেন্দ্রকিশোর রায় চৌধুরীর শতবার্ষিকীবছরে ছবিটি মুক্তি পাবে। ঠাকুরদা উপেন্দ্রকিশোরের লেখা 'গুপী গাইন' গল্পটি ছোটবেলা থেকেই সত্যজিতের প্রিয়। নানা কারণে ১৯৬৭ পর্যন্ত 'গুপী গাইনের চিত্রনাট্য তিনি লিখে উঠতে পারেন নি। তবে গুপী গাইনের চিত্রনাট্যের বিষয়ে ভাবতে বসে তিনি ঠিক করে নিয়েছিলেন যে একটু অপেরা ধর্মী 'মিউজিক্যাল'ছবি করার কথা। চিত্রনাট্য শুরু করার আগেই লিখে ফেলেছিলেন চটি গান। পরে গল্পটিকে সিনেমার মতো করে সাজিয়ে নিয়ে এবং গানগুলিকে উপযুক্ত জায়গায় সংলগ্ন করার কথা মনে রেখেই তিনি চিত্রনাট্য রচনা করেন। ফলে চিত্রনাতটির চাহিদা মতো যুক্ত করতে হয় আরও চারটি গান।

তবে উপেন্দ্রকিশোরের 'গুপী গাইন'-এর সঙ্গে বিস্তর ফারাক সত্যজিৎ রায়ের 'গুপী গাইন বাঘা বাইন'-এর। উপেন্দ্রকিশোরের শিশু ফ্যান্টাসির সঙ্গে সত্যজিৎ সংমিশ্রণ ঘটিয়েছিল বাস্তবতার। ফলে চিত্রনাট্যে এসেছিলো নতুন চরিত্র। তাছাড়া গল্পে ছিল গুপী চালাক, বাঘা একটু সাধাসিধে। হাল্লা রাজা ভালো, শুন্ডি দুষ্টু। ছবিতে দুটোই উল্টো। গুপী বোকা-সোকা, বাঘা বোঝদার। ভালো শুন্ডি, হাল্লা খারাপ।

gupi_body1_050918070037.jpgছবি সৌজন্য: সন্দীপ রায়

কথাছিলো ছবিটির প্রযোজনা করবেন আর ডি বনশল। সেই সময় রাজনীতির ডামাডোলে বনশল তাঁর প্রস্তাব বাতিল করে দেন। চেষ্টা করা হয় ফিল্ম ফিন্যান্স কর্পোরেশনে। সে চেষ্টাও নিষ্ফল হয়ে যায়। জনান্তিকে শুনে সত্যজিৎ রায়কে দিয়ে ছবি করাবার জন্যে এগিয়ে আসেন মুম্বাইয়ের বিখ্যাত অভিনেতা প্রযোজক রাজ কাপুর। রাজি হন টাকাটা দিতে, তবে শর্ত একটা ছবির মুখ্য দুই ভূমিকায় অর্থাৎ গুপী হবেন পৃথীরাজ কাপুর, বাঘা শশী কাপুর। প্রস্তাব বাতিল হয় সেই মুহুতেই। অবশেষে যোগাযোগ করেন নেপাল দত্ত। ঠিক হয় ছবির বাজেট চার লক্ষ টাকা দেবেন নেপাল দত্ত ও অসীম দত্ত।

ছবির চরিত্রানুযায়ী অভিনেতাও অত সহজে ঠিক হয় নি। ১৯৬২-তে ছবি করার প্রাথমিক ভাবনার সময় ভেবেছিলেন গুপী হবেন কাঞ্চনজঙ্গার অরূণ মুখোপাধ্যায়। ভাগ রবি ঘোষ। নানা কারণে ছবি পাঁচ বছর পিছিয়ে যায়। ঠিক হয় গুপী করবেন। গানগুলোও তিনিই গাইবেন। 'ডেট' নিয়ে সমস্যার কারণে কিশোরকুমার করতে পারলেন না। এলেন জীবনলাল বন্দ্যোপাধ্যায়। যিনি পরে সত্যযুগের সম্পাদক হয়েছিলেন। অবশেষে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের বিজ্ঞাপন বিভাগের কর্মচারী তপন চট্টপাধ্যায়। তপন একসময় সন্দেশ পত্রিকার বিজ্ঞাপন বিভাগেও কাজ করেছিলেন। সত্যজিতের পূর্বপরিচিত। 'মহানগর' ছবিতেও একটা ছোট ভূমিকায় দেখা গিয়েছিল। বাঘা গোড়া থেকেই ঠিক রবি ঘোষ। হাল্লা ও শুন্ডি রাজার চরিত্রে প্রথমে ভাবা হয়েছিল ছবি বিশ্বাসকে।

gupi_body2_050918070114.jpgগুপী গেইন ও বাঘা বাইন

হাল্লা মন্ত্রী হবেন তুলসী চক্রবর্তী। পরে দুজনেই মারা যাওয়ায় নির্বাচিত হয়েছিলেন সন্তোষ দত্ত ও জহর রায়। ১৯৬৮-এর জানুয়ারি থেকে শুরু হয় শুটিং। বীরভূমের ভাগমুন্দি আর নতুন গাঁ, শিমলার কাছে কুফরি, জয়েসলমীর থেকে মাইল কুড়ি দূরের মহানগর ও বুঁদি-তে আউটডোরের শুটিং হয়েছিল এই ছবির। জানুয়ারিতে শুরু সেই বছরের ডিসেম্বরে ছবির কাজ শেষ হয়ে যায়। কথা ছিল জানুয়ারিতে ছবিটি মুক্তি পাবে। কিন্তু সেই সময় বাংলা চলচিত্রের আকাশে ঘনিয়ে ওঠে রাজনীতির কালো মেঘ। সপ্তাহের পর সপ্তাহ পিছিয়ে যেতে থাকে মুক্তির তারিখ। অন্যদিকে বার্লিন এবং মেলবোর্ন চলচিত্র উৎসব থেকে ছবিটি দেখানোর অনুরোধ আসে। অবশেষে অনেক টালবাহানার পর ১৯৬৯-এর ৮-মে পঁচিশে বৈশাখ, বৃহস্পতিবার মিনার, বিজলী, ছবিঘর ও ইংরেজি সাবটাইটেলসহ গ্লোবে মুক্তি পায় সত্যজিৎরায়ের 'গুপি গাইন বাঘা বাইন'।

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000

Writer

DEBASHIS MUKHOPADHYAY DEBASHIS MUKHOPADHYAY

Expert on Satyajit Ray

Comment