সিনেমা জগতে ২৪ বছর: মনোজ বাজপেয়ীর অভিনয়ের নেপথ্যে আছে কোন শক্তি
এই ছবিতে বাজপেয়ীর অভিনয় দর্শককে 'আলিগড়' ছবির কথা মনে করিয়ে দেবে
- Total Shares
আপনার হয়তো মনে হতে পারে সিনেমার জগতে দীর্ঘ ২৪ বছর কাটানোর পর মনোজ বাজপেয়ীর কাছে অভিনয়টা এখন জলভাত।
তবে সম্প্রতি মুক্তি পাওয়া 'গলি গুলাইয়া' ছবির সেটে কিন্তু ব্যাপারটা একদমই তেমন ছিল না। তবে সম্প্রতি মুক্তি পাওয়া 'গলি গুলাইয়া' ছবির সেটে কিন্তু ব্যাপারটা একদমই তেমন ছিল না। ছবির গল্পটি খুব জমাটি।
ছবির শুটিংয়ের ২৮ দিনের মাথায় বাজপেয়ী পরিচালককে শুটিং গুটিয়ে দিতে বলেন। পরিচালক হিসেবে দীপেশ জৈনের এটাই প্রথম ছবি। তিনি যে 'খাড্ডুস'-এর চরিত্রে অভিনয় করতে পছন্দ করছিলেন না এমনটা নয়। ছবিতে খাড্ডুস হল এমন একটি চরিত্র যে ছোট একটি বাচ্চার সন্ধান করছেন এবং তাঁর নিজেরও বিভিন্ন সমস্যা রয়েছে।
একে এই ধরণের একটা জটিল চরিত্র তার উপর একটা ভাঙাচোরা বাড়িতে টানা শুটিং করার ফলে তাঁর একটা চাপ সৃষ্টি হয়েছিল।
'গলি গুলাইয়া''-র পোস্টার
তিনি বলেন, "কেমন যেন দমটা বন্ধ হয়ে যাচ্ছিল। আমার একটা বিরতির প্রয়োজন ছিল।"
“খাড্ডুস হচ্ছে এমন একজন ব্যক্তি যে শত চেষ্টা সত্ত্বেও তাঁর অতীতকে পুরোপুরি মুছে ফেলতে পারছে না। চরিত্রটিকে ফুটিয়ে তুলতে আমাকে নিজের অনেকখানি দিতে হয়েছিল। আমি আমার সবরকম অভিনয় দক্ষতা কাজে লাগিয়েছিলাম কিন্তু তবুও কখনও কখনও তাও যেন কম পড়ত।"
চরিত্রটিকে দক্ষভাবে ফুঁটিয়ে তুলতে তাঁকে বেশিরভাগ সময় একাই কাজ করতে হয়েছে এমনকী তাঁর মানসিক অস্থিরতা বোঝাবার জন্য ছবিতে তাঁর বেশি সংলাপও ছিল না।
এই ছবিতে বাজপেয়ীর অভিনয় দর্শককে 'আলিগড়' ছবির কথা মনে করিয়ে দেবে।
খাড্ডুস ও অধ্যাপক সিরস দুজনেই গোটা সমাজের সঙ্গে এককভাবে লড়াই করছে।
একদিকে বাবা-ছেলের তিক্ত সম্পর্ক অন্যদিকে একজনের ছেলেবেলার খাড়াও কিছু স্মৃতি তাঁর বর্তমানকে নষ্ট করে দিতে পারে এই নিয়ে গড়ে উঠেছে 'গলি গুলাইয়া' গল্প, অনেকটা 'উড়ান'-র ছবির গল্পের মতো।
'সত্যা' ছবির একটি দৃশ্য
দিল্লির কয়েকটি জায়গায় পরিচালক জৈন ছবির শুটিং করেছেন। তিনি দর্শকের সামনে সব কিছু প্রস্তুত করে দেননি। তিনি পুরো ঘটনাটাই দেখিয়েছেন তবে ছোট ছোট অংশে যাতে দর্শকের কৌতূহল আরও বৃদ্ধি পায়।
ছবিটি বেশ ভালো তবে ছবিতে বাজপেয়ী ও শিশু শিল্পী ওম সিংহের অভিনয় নজর কাড়ে। এটাই ওমের প্রথম ছবি।
একজন পরিচালক যাঁর ছবি পরিচালনা সম্পর্কে কোনও অভিজ্ঞতা নেই তেমন একজন আনকোরা পরিচালকের সঙ্গে কেন কাজ করার কথা ভাবলেন তিনি, বাজপেয়ী বলেন, "একজন অভিজ্ঞ পরিচালক কোনও রকম পরীক্ষামূলক বিষয় নিয়ে ছবি করবেন সেটা আমার মনে হয় না। এযুগে এই পেশায় যাঁরা নতুন আসছেন তাঁরা হলিউডের ছবি ছাড়াও অন্যান্য ছবিও দেখেন। তাই সিনেমা সম্পর্কে তাঁদের জ্ঞানকে আমি সম্মান করি। অভিনেতা হিসেবে আপনি যদি নিজেকে আরও উন্নত করতে চান তাহলে আপনাকে এই ধরণের পরিচালকদের সঙ্গেও কাজ করতে হবে।"
তাই তিনি কোনও ট্যালেন্ট মানাগমেন্ট সংস্থার সঙ্গে যুক্ত হননি। কারণ তিনি মনে করেন যে এই সংস্থাগুলি তাঁকে 'গলি গুলিয়া' কিংবা 'সত্যমেব জয়তে'-এর মতো ছবি করতে উৎসাহ যোগাবে না।আমির খান ও শাহরুখ খানের মতো তাঁরও একজন ব্যক্তিগত মেনেজার আছেন। যদিও বলিউডে প্রায় সবাই ট্যালেন্ট মানাগমেন্ট সংস্থার সঙ্গে যুক্ত।
তিনি বলেন, “আমার কাজ দেখে লোকেরা আমাকে আরও কাজ দিয়েছেন। আমার বাজার এবং আমার নাম যখন আমি নিজেই তৈরি করেছি তখন সেই সাফল্যে আমি তাঁদের কেন ভাগিদার করব?”
ছবিতে বাজপেয়ীর অভিনয় দর্শককে 'আলিগড়' ছবির কথা মনে করিয়ে দেবে
তিনি বলেন, “আমি এগিয়ে যাবো। এবেং আমার ঠিক যেটা করতে ভালো লাগে আমি সেটাই করব। আমি লোভ বা কোনও ভয়ের বশবর্তী হয়ে কোনও কাজ করি না।"
এই পদ্ধতিটি তাঁর জন্য বেশ খেটেও গেছে। কারণ তাঁর হাতে এখন অনেক কাজ।
সেপ্টেম্বর মাস এলে 'লাভ সনিয়া' ছবিতে তাঁকে একটি বিশেষ চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা যাবে। নারী ও শিশু পাচা নিয়ে ছবিটিতে তিনি ছাড়াও মৃনাল ঠাকুর, রিচা ছাড়া ও ফরিদা পিন্টো অভিনয় করেছেন।
পরের বছর আমরা তাকে অভিষেক চৌবের ছবি 'সান চিড়িয়া' ছবিতে সুশান্ত সিংহ রাজপূত ও ভূমি পেদনেকড়ের সঙ্গে অভিনয় করতে দেখা যাবে। এছাড়াও তিনি দেবাশীষ মাখিজার ছবি 'ভোঁসলে' -তে একজন ব্যক্তি যিনি দীর্ঘদিন ধরে অসুখে ভুগছেন এমন অবসর প্রাপ্ত পুলিশ কনস্টেবলের চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা যাবে। তিনি বলেন, “"না বলা তা যেমন কঠিন, জীবনের এই সময় একটা অবসর নেওয়াটাও ঠিক তেমনটাই কঠিন।"
কোনও একজন অভিনেতার পক্ষে এর চেয়ে বাজে পরিস্থিতির উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত আর কিছুই হতে পারে না।
(সৌজন্যে মেল টুডে)
লেখাটি ইংরেজিতে পড়ুন