আমজাদ খানের জীবনের নায়ক ও ভিলেন একজনই - গব্বর সিং
ছোট্ট অভিষেক অমিতাভ বচ্চনকে খবর দিয়েছিল, "বাবা গব্বর সিং এসেছে"
- Total Shares
জলপাই সবুজ রঙের একটি ধূসর বসন, একটি পিস্তল, একটি ছোট আংটি, দাড়ি ভর্তি একটি অপরিচ্ছন্ন মুখ আর তার সঙ্গে একজোড়া জুতো যা যতবার আওয়াজ করে ততবারই যেন হৃদকম্পন বাড়িয়ে দেয়। ১৯৭৫ সালের কথা বলছি। আর, সেই সময় তো দুষ্ট লোক বলতে একটা মুখই চোখের সামনে ফুটে উঠত - গব্বর সিং তথা আমজাদ খান।
বলিউডের ভিলেনদের নিয়ে যদি একটি বই লেখা হয় তাহলে গব্বর সিংকে নিয়ে একটি আলাদা অনুচ্ছেদ থাকবেই। দুটোও থাকতে পারে। কারণ দর্শকের উপর এই চরিত্রটির প্রভাব এককথায় অভূতপূর্ব। সালিম খান ও জাভেদ আখতারের সৃষ্টি করা এই চরিত্রটি এতটাই শক্তিশালী ছিল যে তৎকালীন বলিউডের দুই জনপ্রিয় অভিনেতা - অমিতাভ বচ্চন ও সঞ্জীব কুমার - পর্যন্ত হিরোর চরিত্র ছেড়ে এই চরিত্রে অভিনয় করার জন্য নাছোড়বান্দা ছিলেন।
কিন্তু, এই চরিত্রটি যেন আমজাদ খানের জন্যেই তৈরি হয়েছিল।
এই সিনেমাটি ও আমজাদ খানের জন্যে এই চরিত্রটি আশীর্বাদ হয়ে উঠেছিল। এই চরিত্রটির পর আমজাদ খানের ভাগ্যে একের পর এক সিনেমা করা ও বিজ্ঞাপনে অভিনয় করার সুযোগ জুটেছিল। এই বিজ্ঞাপনগুলির মধ্যে ব্রিটানিয়া গ্লুকোজ-ডি বিস্কুটের বিজ্ঞাপনটি তো বহুচর্চিত। এই বিজ্ঞাপনের ট্যাগলাইন ছিল - গব্বর কি আসলি পসন্দ। বিজ্ঞাপনে দেখানো হয়েছিল যে গব্বর তার চামচাদের অন্য বিস্কুট আনার জন্য গুলি করে মেরে ফেলছেন। তার পর অর্ধেক প্যাকেট বিস্কুট একসঙ্গে মুখে পুড়ে ফেলছেন।
বিজ্ঞাপনটা দেখলে হয়ত লোক ভোলানো মনে হতে পারে। কিন্তু গব্বর সিং তাতেও বাজিমাত করে দিয়েছিলেন।
সিনেমাতেও এধরণের গল্প দেখা যায়।
যাই হোক, এর পর ৭০, ৮০ ও ৯০এর দশকে আমজাদ খান একের পর এক নেগেটিভ চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। কারণ নেগেটিভ চরিত্রে আমজাদ খান মানে বক্সঅফিসে তোলপাড়। বিজয় যদি সিনেমার নায়ক হয়, তাহলে গব্বরকে ভিলেন হতেই হবে। কোনও প্রযোজক বা পরিচালকই তো উইনিং ফর্মুলা থেকে বেরিয়ে আসতে পারেন না।
গব্বর সিং অতুলনীয় [সৌজন্যে: ইউটিউব]
আমজাদ খানের অন্য চরিতগুলো কিন্তু গব্বরের সমকক্ষ নয়। ইনকার, দেশ-পরদেশ, নাস্তিক বা সত্তে পে সত্তার আমজাদ আমাদের খুব প্রিয়। কিন্তু কোনও ভাবেই এই চরিত্রগুলো গব্বর নয়।
গব্বর গব্বরই। তার কোনও তুলনা চলেনা। হাজার হোক, আমরা কি কোনও দিনও বিজয়ের সঙ্গে অমিতাভের আর কোনও চরিত্রের মিল খোঁজার বৃথা চেষ্টা করি। একদমই নয়।
তবে আমজাদ কিন্তু ভিলেনের চরিত্রে বাইরে গিয়েও অভিনয়ের চেষ্টা করেছেন - যেমন চ্যামেলি কি শাদি, শতরঞ্জ কি খিলাড়ি কিংবা উৎসব।
কিন্তু তা সত্ত্বেও গব্বর গব্বরই। আমজাদ খান যেদিন অমিতাভের বাড়ি গিয়েছিলেন সেদিন ছোট্ট অভিষেক নাকি দৌড়িয়ে গিয়ে বাবাকে খবর দিয়েছিলেন, "বাবা গব্বর সিং এসেছে।"
আমজাদ খানের কথা মনে পড়লেই আমাদের কিন্তু গব্বরের কথা মনে পড়ে।
গব্বরের প্রভাব এতটাই শক্তিশালী।
লেখাটি পড়ুন ইংরেজিতে