নাচনি থেকে বাঁধবাসী: ক্যামেরায় জীবনের নানা চালচিত্র
'স্মৃতিঘরের বাতিওয়ালা' ও 'নিভৃতে রেখেছি আপনগান' শহরে বেশ সাড়া জাগায়
- Total Shares
পেশাগত ভাবে আমি গ্রাফিক ডিজাইনার, তবে ফটোগ্রাফি আমার আত্মপ্রকাশের অন্যতম মাধ্যম। মানুষ, বিশেষত প্রান্তিক মানুষ, তাঁদেরর আর্থ-সামাজিক অবস্থান, সংস্কৃতি – এ সবের ছবি তোলার দিকেই আমার ঝোঁক। গত আড়াই বছর ধরে ‘শুধু সুন্দরবন চর্চা’ পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত হওয়ার সুবাদে ভারতবর্ষের পূর্বপ্রান্তীয় এই ভাটির দেশের মানুষের মুখের আলোছায়া দেখার সুযোগ হয়েছে বারবার। সেই সব মানুষ, যাঁরা দীর্ঘদিন ধরে এক প্রতিকূল প্রাকৃতিক পরিবেশের মাঝেও টিকিয়ে রেখেছেন তাঁদের অস্তিত্ব, শুধুমাত্র তাঁদের রোজনামচা নিয়ে ছবি তোলার ভাবনা সেখান থেকেই।
বাঁধের ধারে যাদের বাস। (ছবি: লেখক)
'শুধু সুন্দরবন চর্চা'র আরও এক চিত্রগ্রাহক কৌশিক চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে আলাপ এ ভাবে কাজ করতে করতেই। পত্রিকা সম্পাদক জ্যোতিরিন্দ্র নারায়ণ লাহিড়ী ও বাকি সদস্যদের অকৃপণ সহযোগিতা সুন্দরবন নিয়ে ছবি তোলার ক্ষেত্রে আমায় জানার পরিধি বিস্তৃত করেছে।
আমরা একটা দল হিসাবে কাজ করতে করতে, ব্যক্তি মানুষ হিসেবেও অনেকখানি নিজেদের উন্নীত করতে পেরেছি বলেই আমার বিশ্বাস। আমাদের নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী আমরা ছবি তুলি। হয়তো পাশাপশি দাঁড়িয়ে দু’জন ব্যক্তি ছবি তুলছি, কিন্তু ছবির বিষয় আলাদা, বা বিষয় একই হলেও ফ্রেমটা আলাদা। ছবি তোলা শেষ হলে আমরা আবার একটা দল।
স্মৃতিঘরের বাতিওয়ালা। (ছবি: লেখক)
'বাঁধের ধারে যাদের বাস' শীর্ষক প্রদর্শনীতে আমরা সুন্দরবনের বাঁধসংলগ্ন জীবনটাই তুলে ধরেছি। 'শুধু সুন্দরবন চর্চা' পরিবারের পক্ষ থেকে এটুকুই বলার, বছরভর সুন্দরবনের মানুষের সঙ্গে জড়িয়ে থেকে কাজ করার সুবাদে কোথাও একটা দায়বদ্ধতা আমাদের থেকেই যায় যে শহরের সাধারণ মানুষের কাছে তাদের যাপনচিত্র যথেষ্ট তথ্যনিষ্ঠ ভাবে সততার সঙ্গে পৌঁছে দেওয়ার।
আট বছর ধরে আমাদের পত্রিকা সেই কাজটা সাধ্যমতো করার চেষ্টাও করে। এই প্রদর্শনী সেই অর্থে এক নতুন উত্তেজনার রসদ আমাদের সবার কাছে, যেখানে শুধুমাত্র আলোকচিত্র আর পুরাতত্ত্বের কিছু নিদর্শনকে সামনে রেখে আমরা আরও একটু গভীর ভাবে সকলের কাছে পৌঁছনোর সুযোগ পেলাম। বাঁধের ধারের মানুষ ভাঙনের গ্রাসে পিছতে পিছতেও কী ভাবে ঘুরে দাঁড়ান, স্বপ্ন দেখেন, ভালোবাসার আগুন জ্বালান – এই প্রদর্শনী তারই কিছুটা ধারণা দেওয়ার চেষ্টা।
সুইডেনে মিডসামার। (ছবি: লেখক)
ফোটোগ্রাফিতে আমার আগ্রহটা বলা যায় হঠাৎই। ডিজাইনিং-এর কাজের সুবিধার জন্য ডিএসএলআর ক্যামেরা কেনা, আর তার পরেই ছবির প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ি এবং প্রচুর ছবি দেখা শুরু করি। ছবি দেখা ও ছবি তোলা – এই দুটো জিনিস একই সঙ্গে করতে করতে বেশ কয়েক বছর আগে সংগ্রাহক সুশীল চট্টোপাধ্যায়কে (নকুবাবু) নিয়ে তাকে নিয়ে করা আলোকচিত্রের প্রদর্শনী 'স্মৃতিঘরের বাতিওয়ালা' ও 'নিভৃতে রেখেছি আপনগান' শহরে বেশ সাড়া জাগায়। সেই ছবি প্রদর্শিত হয়েছিল বিলেতের বিভিন্ন শহরেও।
সুইডেন দূতাবাস আয়োজিত একটি আলোকচিত্র প্রতিযোগিতায় পুরস্কৃত হওয়ার সুবাদে বেশ কিছুদিনের জন্য সুইডেন ভ্রমণের সুযোগ হয় আর সেই ছবি নিয়ে কলকাতায় আইসিসিআর-এ একটি প্রদর্শনীও হয়।
পুরুলিয়ার নাচনি। (ছবি: লেখক)
পুরুলিয়ার নাচনি নিয়ে সম্প্রতি একটি গবেষণামূলক ফটোগ্রাফিক স্টোরি সাহাপিডিয়া গ্রান্ট পেয়ে সমালোচকদের প্রশংসাধন্য হয়েছে। বিগত কয়েকবছর ধরে নিয়মিত ভাবে সুন্দরবনে গিয়ে এবং থেকে অক্লান্তভাবে সুন্দরবনের প্রান্তিক মানুষের দিনলিপি লেন্সে ধরে রাখতে সচেষ্ট।
২০০৮ সালে এসএলআর ক্যামেরা কেনার সময় মনেই হয়নি ছবি তোলাটা অল্প দিনের মধ্যেই আমার প্রাত্যহিক জীবনের অঙ্গ হয়ে যাবে। সৃজনশীল কাজের তাগিদেই একদিন ক্যামেরা কিনেছিলাম, আর আজ আমি তার সঙ্গে নিজেকে কী ভাবে যেন মিশিয়ে ফেলেছি।