পঞ্জিকা মতে দিন যাই হোক, বর্ষা যখন আজ নেমেছে, তা হলে আজই আষাঢ়স্য প্রথমদিবসে...

‘দূত’ বা ‘সন্দেশ’ কাব্যের মধ্যে মেঘদূত শুধু শ্রেষ্ঠতমই নয় – প্রাচীনতম

 |  2-minute read |   24-06-2018
  • Total Shares

বর্ষা নিয়ে কত কাব্যই না রচিত হয়েছে, কিন্তু সেরা কাব্য কোনটি? প্রশ্ন করার আগেই উত্তর দিয়েছেন স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। বিচিত্র প্রবন্ধে তিনি লিখছেন, “মেঘদূত ছাড়া নববর্ষার কাব্য আর কোনও সাহিত্যে কোথাও নাই। ইহাতে বর্ষার সমস্ত অন্তর্বেদনা, নিত্যকালের ভাষায় লিখিত হইয়া গেছে। পৃথিবীর সাংবাৎসরিক মেঘোৎসবের অনির্বচনীয় কবিত্বগাথা মানবের ভাষায় বাঁধা পড়িয়াছে। বর্ষায় আমাদের মন অভ্যস্ত ও পরিচিত সংসার হইতে বিক্ষিপ্ত হইয়া বাহিরের দিকে যাইতে চায়। পূর্বমেঘের কবি আমাদের সেই আকাঙ্ক্ষাকে উদ্বেলিত করিয়া তাহারই কলগান জাগাইয়াছেন। আমাদিগকে মেঘের সঙ্গী করিয়া অপরিচিত পৃথিবীর মাঝখান দিয়া লইয়া চলিয়াছেন। অজ্ঞাত নিখিলের সহিত নবীন পরিচয়, এই হইল পূর্বমেঘ।...”

cover_062418015647.jpgকৃষ্ণদয়াল বসু অনূদিত মেঘদূতের মলাট 

পরে সেই রবীন্দ্রনাথই লিখছেন,

কবিবর, কবে কোন্ বিস্মৃত বরষে/ কোন পুণ্য আষাঢ়ের প্রথম দিবসে/ লিখেছিলে মেঘদূত। মেঘমন্দ্র শ্লোক বিশ্বের বিরহী যত সকলের শোক/রাখিয়াছ আপন আঁধার স্তরে স্তরে/ সঘন সংগীত মাঝে পূঞ্জীভূত ক’রে।।

body1_062418015323.jpgকৃষ্ণদয়াল বসুর বইয়ের ভিতর থেকে, অলঙ্করণ আশু বন্দ্যোপাধ্যায়

কালিদাস লিখছেন,

তস্মিন্নদ্রৌ কতিচিদবলাবিপ্রযুক্তঃ স কামী নীত্বা মাসান্ কনকবলয়ভ্রংশরিক্ত প্রকোষ্ঠ।

আষাঢ়স্য প্রথমদিবসে মেঘাশ্লিষ্টসানুং বপ্রক্রীড়াপরিণতগজপ্রক্ষণীয়ং দদর্শ।।

তারই অনুবাদ করছেন কৃষ্ণদয়াল বসু

কামানলে দহি’ সে প্রিয়াবিরহী

    কতিপয় মাস যাপিলে পর,

কর হ’তে তা’র কনক-বলয়

    খসিয়া যখন রিক্ত কর, --

দেখে, আষাঢ়ের প্রথম দিবসে

    গিরি-সানুদেশে হয়েছে নত

নব জলধর, -- যেন গজবর

    বপ্রক্রীড়া-বিলাসে রত।

body_062418015711.jpgনরেন্দ্র দেব অনূদিত মেঘদূতের মলাট

মেঘদূতের আর এক অনুবাদক নরেন্দ্র দেব লিখছেন, “ঐতিহাসিক ও পুরাতত্ত্ববিদ বন্ধু অধ্যাপক শ্রীযুক্ত চিন্তাহরণ চক্রবর্তী মহাশয় বহু গবেষণা করে স্থির করেছেন যে ‘দূত’ বা ‘সন্দেশ’ কাব্যের মধ্যে মেঘদূত শুধু শ্রেষ্ঠতমই নয় – প্রাচীনতম। মেঘদূতের অনুকরণে জড়পদার্থকে দূত ক’রে পরবর্তীকালে ‘চেতদূত’ ‘মেনদূত’ ‘পবনদূত’ ‘হৃদয়দূত’ ‘শিলাদূত’ ‘পদাংকদূত’ ‘বাতদূত’ ‘চন্দ্রদূত’ ‘তুলসীদূত’ ‘নেমীদূত’ প্রভৃতি অসংখ্য দূতকাব্য রচিত হয়েছিল। এ ছাড়া ‘হংসদূত’ ‘পিকদূত’ ‘শুক সন্দেশ’ ‘চকোর সন্দেশ’ ‘ময়ূর সন্দেশ’ ‘ভ্রমরদূত’ ‘ভৃগু সন্দেশ’ ‘কোকিল সন্দেশ’ ‘পান্থদূত’ প্রভৃতি সচেতন প্রাণীকে দূত করেও মহাকাব্য বিরচিত হয়েছিল।

body3_062418015731.jpgশিল্পী পূর্ণ চক্রবর্তীর অলঙ্করণ, মেঘদূত থেকে

“অনেকে মনে করেন যে মহাভারতে দময়ন্তীর হংসদূত প্রেরণ বা রামায়নে রামের হনুমানকে সীতার নিকট দূত রূপে পাঠানো থেকেই কালিদাসের মনে ‘মেঘদূত’ রচনার কল্পনা জেগে উঠেছিল কিংবা বৌদ্ধজাতকের ‘কামবিলাপজাতক’ যাতে জনৈক বিরহী তার পত্নীকে বায়সমুখে সন্দেশ পাঠাচ্ছে সেই আখ্যায়িকাই কালিদাসকে মেঘদূত রচনায় প্রবুদ্ধ করেছিল। মল্লিনাথ ও বল্লভদেব এবং দক্ষিণাবর্তনাথ রামায়ণের নিকট কালিদাসের ঋণ সমর্থন করেন। আবার কেউ কেউ এমন কথাও বলেন যে যমকাব্য রচয়িতা ঘটকর্পর যিনি কালিদাসের সমসাময়িক কবি ও বিক্রমসভার নবরত্নের অন্যতম ছিলেন তাঁরই নিকট মেঘদূতের জন্য কালিদাস ঋণী!কিন্তু এ সকল অনুমান প্রামাণ্য ও বিচারসহ নয় নয় বলে এ সম্বন্ধে আলোচনা নিষ্ফল। তবে বাল্মীকির নিকট কালীদাসের ঋণ সম্পূর্ণ রূপে অস্বীকার করা চলে না।”

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000

Writer

Comment