শহর থেকে উড়ে গেছে হাড়গিলে পাখি, বদলেছে পুরসভার লোগোও

হগ সাহেবের বাজারের মতো কয়েকটা জায়গায় হয়তো এখনও রয়েছে সোই লোগো, পাখিটাই নেই

 |  3-minute read |   27-05-2018
  • Total Shares

হাঘরে বাঙালি ভাগাড়ের খাবার সাবাড় করে দিন যাপন করছে, তখন একটা ভাইরাল কার্টুন দেখে বেশ আমোদ পেলাম। দুটো শকুনের কথোপকথন। এক জন আরেক জনকে বলেছে, মানুষ তাদের খাবার খেয়ে ফেলেছে বলে তাদের খুব দুঃখ। একসময় এই শকুনের মতোই হাড়গিলে পাখির দল একই কথা বলতে বলতে কলকাতার আকাশ ছেড়েছে...

bw_body_052718055627.jpgএখন আর শহরে দেখা যায় না হাড়গিলে পাখি

এই কলকাতার আকাশেও একসময় এই হাড়গিলে পাখিরা উড়ে বেড়াত... .নামেই বোঝা যায় তার কাম... হাড় অবধি গিলে ফেলতে পারে বলেই এর এই নাম। বাঙালিরা আদর করে নাম রেখেছিল হাড়গিলে। আর ইংরেজ বাহাদুর তাকে অন্য স্বীকৃতি দেয় অন্য ভাবে, সে প্রসঙ্গে পরে আসছি।

আজ এই মহানগরের মাটিতে দাঁড়িয়ে এটা বলা যায় যে শহরের জঞ্জাল পরিস্কার করার প্রয়াস সে অনেক দিন ধরেই চলছে, ১৭৯৪ সালে ইংল্যান্ডে প্রণীত একটা আইনের বলে কলকাতার পৌর আইন ও শাসন ব্যবস্থার জাস্টিসের অফ পিস কে দেওয়া হয় এবং এই ভাবেই পরবর্তীতে ১৮৭৭ সালে পৌর সভার একটা প্রতিবেদনে দি আর্মি স্যানিটরি কমিশনকে (the army sanitary commission) কলকাতার রাস্তায় ডাস্টবিন রাখার প্রস্তাব দেওয়া হয়। এর ফলে কলকাতায় জঞ্জাল অপসারনের জন্য তিনটি বিভাগ চালু করতে হয়: গোখানা, জঞ্জাল রেল, আর আজকের ধাপা স্কায়ার মাইল। এই ব্যবস্থার ফলে অধিকাংশ আবর্জনা অপসারণ করা হলেও কিছু ময়লা পড়েই থাকতো।

body4_052718055746.jpgনিউমার্কেটে হাড়গিলে পাখিওয়ালা সেই লোগো এখনও রয়েছে

এ ছাড়াও কলকাতার কয়কটি অংশ খুবই খারাপ অবস্থায় ছিল, বিক্ষিপ্ত ভাবে রাস্তায় ছড়িয়ে থাকত এই আবর্জনা। ক্ষিতীন্দ্রনাথ ঠাকুর মজা করে লিখলেন... সুরভিপরাগ বহন করিয়া আনিবার পরিবর্তে নিগাধের কঠোর রৌদ্রতাপে ধূলি পরিণত সেই সমস্ত আবর্জনার গুঁড়া বহিয়া আনিয়া চক্ষুকর্ণ ভরিয়া দিত, মলয়বায়ু উপভোগ পরিবর্তে প্রায় সমস্ত পথ নাকে কাপড় দিয়া চলতে হইত... আর এই সময় কলকাতার আকাশ থেকে নেমে আসে হাড়গিলেরা...”

ড্যানিয়েলের আঁকা কলকাতার আকাশে তখন হাড়গিলের দল, যে কোনও সাফাইকর্মীর থেকে দ্বিগুণ ক্ষিপ্রতায় তার অধিকাংশ ময়লা খেয়ে কলকাতাকে পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করেছিল… শকুনের মতোই হাড়গিলে পাখিও মৃত পশুর দেহাবশেষ খেয়ে সাফ করত, আর তাই শহরের পরিবেশ রক্ষায় হাড়গিলের ভুমিকার স্বীকৃতি দিয়েছিলেন তৎকালীন পুরসভার বড় কর্তারা। ১৮৯৬ সালে যখন প্রথম মোহর চিহ্ন(এমব্লেম) তৈরি করা হয় পুরসভার তখন তাতে ছিল দুটো হড়গিলে পাখি।

body_logo_052718061153.jpgহাড়গিলের ছবি-সহ কলকাতা পুরসভার লোগো

১৮৯৬ সালে কলকাতার পুরসভার একটা একটা Coat of Arm  বা এমব্লেম তৈরি করার কথা ভাবা হয়। ইংল্যান্ডের খুবই ঐতিহ্যবাহী কলেজ College of Arms, যারা ইংল্যান্ডে রাজের এমব্লেম তৈরি করতেন, তাঁদের উপর  দায়িত্ব পড়ে এই লোগোর তৈরি করার। তারাই সেই সময়ে কলকাতার পুর সভায় লোগো তৈরি করে। এখানে দেখা যাচ্ছে দুটো হাড়গিলে পাখির, দুই দিক থেকে পুরো লোগোটাকে ধরে রেখেছে পাখি দুটো। গায়ে বৃটিশ রাজের মুকুটের চিহ্ন মুদ্রিত, পাখিদুটোর মুখে সাপ। তাদের অপরিসীম সাফায়েত সহযোগিতা করা মনে করিয়ে দেয়: জাহাজ, ক্ষমতা ও শক্তির প্রতীক সিংহ আর পদ্মফুল হাতে নেওয়া একটা সামুদ্রিক সিংহ বা sea Iion-এর ছবি ওলা জমজমাট এমব্লেম। নীচে উদ্দেশ্যে লেখা ছিল ল্যাটিন ভাষায়: per ardua stablisesto ইংরেজিতে যার মানে হয়, "the steep slope be sure"। এই লোগোগুলোকে বগলদাবা করে পাখিগুলো যে কোথায় গেল কে জানে! আর একটা কথা আগ্রহীদের জন্য জানিয়ে রাখা দরকার, ইংরেজিতে এ পাখির নাম, গ্রেটার অ্যাডজুট্যান্ট।

শুধু রাজার মুকুট বুকে নিয়ে এখনো দাঁড়িয়ে আছে সেই দুটো হড়গিলে নিউমার্কেটের মাথায় বা এখনো ওখানে আনাচে-কানাচে।

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000

Writer

SOUVIK MUKHERJEE SOUVIK MUKHERJEE

One of the Architects of Tram Museum, Kolkata and Collector

Comment