ভিক্টোরিয়া মোমোরিয়াল হলে কোম্পানি আমলের গাছের ছবির প্রদর্শনী

রয়্যাল অ্যালবার্ট মেমোরিয়াল মিউজিয়ামে ছবিগুলি কী ভাবে গেল, সেই ঘটনা চমকপ্রদ

 |  3-minute read |   11-11-2018
  • Total Shares

বেশ কয়েকবছর আগের কথা। ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল হলের ভিতরে তখন ছবি তোলা নিষেধ ছিল। তারমধ্যেও বিশেষ অনুমতি নিয়ে কয়েকটা ছবি তুলেছিলাম। সে বার ভিক্টোরিয়া অ্যান্ড অ্যালবার্ট মিউজিয়ামে রক্ষিত কালীঘাটের পট প্রদর্শিত হয়েছিল।

তার কয়েক বছর পরে এই জাদুঘরের অধ্যক্ষ জয়ন্ত সেনগুপ্ত বলেছিলেন এই ধরনের প্রদর্শনী নিয়মিত করা যায় না। তা ছাড়া ‘আসল’ নিদর্শন দেখানোর দেখানোর জন্য দীর্ঘ সময় ধরে প্রস্তুত হতে হয় উভয় পক্ষকেই – যাঁরা সেই নিদর্শন পাঠাচ্ছেন এবং যেখানে সেই নিদর্শন পাঠাচ্ছেন।

অনেক দিন পরে আবার তেমন একটি প্রদর্শনী হতে চলেছে সেই ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল হলেই। এ বার রয়্যাল অ্যালবার্ট মেমোরিয়াল মিউজিয়ামের সঙ্গে একযোগ, সহযোগিতা করছে ইউনিভার্সিটি অফ এগজেটার। বিষয়টিও ভিন্ন – কোম্পানির সময়ে আঁকা ভারতীয় গাছগাছালির ছবি।

ব্রিটিশরা ভারতে এসে এ দেশের সম্পদের তালিকাকরণ শুরু করেছিল। সঙ্গে দেশীয় শিল্পদের দিয়ে ‘ডকুমেন্টেশেন’। অর্থাৎ ছবি আঁকানো। সে কালে ছবিই ছিল ভরসা, ফোটোগ্রাফি প্রসেস শুরুই হয় ১৮২৪ সালে, উন্নতি শুরু হয় ১৮৩৮ সালে। ভারতে এসেছে আরও অনেক পরে। আর এ দেশে কোম্পানি শাসন শেষ হয় ১৮৫৭ সালে সিপাহি বিদ্রোহের পরে।

kadam_111118032233.jpgকোম্পানি আমলে আঁকা কদম ফুল (ছবি সৌজন্য: রয়্যাল অ্যালবার্ট মেমোরিয়াল মিউজিয়াম)

ইউনিভার্সিটি অফ এগজেটার ও রয়্যাল অ্যালবার্ট মেমোরিয়াল মিউজিয়ামে গত বছর অক্টোবরে বক্তৃতা করতে গিয়েছিলেন জয়ন্ত সেনগুপ্ত। সেখানে ওই বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই ভারতীয় উদ্ভিদের চিত্রকলার সংগ্রহ তাঁকে দেখানো হয়। সেগুলি সবই ১৮৩০-৪০-এর দশকে আঁকা ভারতীয় গাছগাছালির ছবি। সেই তালিকায় কদম থেকে তেঁতুল – কিছুই বাদ নেই। এই ধরনের অন্তত ১০০টি ছবি রয়েছে তাঁদের সংগ্রহে। সেই ছবি সংগ্রহের গল্প শোনালেন ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল হলের অধ্যক্ষ।

এই ছবিগুলির রয়্যাল অ্যালবার্ট মেমোরিয়াল মিউজিয়ামে এসেছে রিচার্ড গ্রেসওয়েল নামে এক ব্যক্তির কাছ থেকে, তবে ছবিগুলির প্রকৃত সংগ্রাহক ছিলেন তাঁর স্ত্রী। তিনি কলকাতায় ছিলেন এবং তাঁর সঙ্গে আলাপ ছিল লেডি ইম্পের। লেডি ইম্পে হলেন সুপ্রিম কোর্টের (তখন সেটি ছিল ফোর্ট উইলিয়ামের ভিতরে) প্রথম বিচারপতি স্যার এলিজা ইম্পের স্ত্রী। লেডি ইম্পে ভারতীয় জীববৈচিত্রের (ফ্লোরা অ্যান্ড ফনা) ছবি আঁকাতেন ভারতীয় শিল্পীদের দিয়েই। সেই সূত্রেই ছবিগুলি রয়্যাল অ্যালবার্ট মিউজিয়ামে গিয়েছে।

ওই একই সময়ের একটি সংগ্রহ ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল হলেও রয়েছে, জন ফ্লেমিং নামে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির একজন চিকিৎসকের, যদিও তিনি একাধারে শখের প্রাণীবিজ্ঞানী ও উদ্ভিদবিজ্ঞানী ছিলেন। তিনিও এই ধরনের প্রচুর ছবি সংগ্রহ করেছেন। তিনি এক সময় বট্যানিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার ভারপ্রাপ্ত নির্দেশকও হয়েছিলেন।

ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল হলের নিজের সংগ্রহে রয়েছে ওই সময়ের বিভিন্ন পশুপাখির ছবি, সঙ্গে গাছপালা।

indian-natural-histo_111118032304.jpg বাঁ দিকে সংরক্ষণের আগের ছবি ও ডানদিকে পরের (ছবি সৌজন্য: রয়্যাল অ্যালবার্ট মেমোরিয়াল মিউজিয়াম)

জয়ন্ত সেনগুপ্ত বলেন, “উভয়ের সংগ্রহেই একই ধরনের চিত্রকলা রয়েছে। তাই তখন আমরা আলোচনা করি। এপ্রিল মাসে আমি আবার এগজিটারে যাই, ওঁরাও আসেন। তখন সিদ্ধান্ত হয় আমাদের সংগ্রহ এবং ওঁদের সংগ্রহ মিলিয়ে একটি বড় মাপের প্রদর্শনী করার। তবে এ জন্য সময় লাগবে। ২০২০ সালে এই প্রদর্শনী হবে বলে স্থির হয়েছে। এর জন্য প্রশাসনিক পদ্ধতি যেমন রয়েছে তেমনি আসল সংগ্রহ এক দেশ থেকে অন্য দেশে নিয়ে যাওয়ার নির্দিষ্ট পদ্ধতিও রয়েছে। তবে তার চেয়েও বড় কথা হল জন ফ্লেমিং ও রিচার্ড গ্রেসওয়েলের মধ্যে যোগাযোগ কেমন ছিল, কী ভাবে ব্রিটিশরা ভারতীয় বিভিন্ন সম্পদ, রীতিনীতি ও সংস্কৃতিকে নথিবদ্ধ করেছে (এ জন্য বিভিন্ন সার্ভেও স্থাপন করেছিল তারা, তারই অঙ্গ হিসাবে কী ভাবে প্রাণী ও উদ্ভিদজগৎ) সে সব তুলে ধরার জন্য উপযুক্ত গবেষণা। যাঁরা সংগ্রাহক ছিলেন তাঁদের মধ্যে কী ধরনের যোগাযোগ ও পারস্পরিক সহযোগিতা ছিল, তাঁরা কী ধরনের ভারতীয় শিল্পীদের অর্থের বিনিময়ে ছবিগুলি আঁকাতেন – এ সব নিয়ে কাজ করতে সময় কিছুটা সময় তো লাগবেই।”

তাঁর কথায়, “ব্রিটিশদের অর্থানুকূল্যে কী ভাবে মোগল শিল্পকলা থেকে নতুন এই কলার উদ্ভব হল ভারতীয় প্রাণী উদ্ভিদজগতকে নতুন করে দেখা শুরু হল, কী ভাবে মোগল চিত্রকলা ধীরে ধীরে বদলাতে লাগল তা নিয়েই একটি যৌথ গবেষণাপ্রকল্পের পরিকল্পনা আমরা করি। শুধু কয়েকটি ছবির প্রদর্শন নয়, এই প্রদর্শনী হবে জ্ঞানের আকর।” জয়ন্তবাবু জানান যে এই গবেষণা করতে বেশ কিছুটা সময়ও লাগবে, কাজ বেশ কিছুদিন আগে শুরু হলেও ১৫ নভেম্বর এ নিয়ে একটি সমঝোতা (মউ) সই হবে।

strawberry-headed-cl_111118032350.jpgকোম্পানি আমলে আঁকা স্ট্রবেরি (ছবি সৌজন্য: রয়্যাল অ্যালবার্ট মেমোরিয়াল মিউজিয়াম)

সেই সন্ধ্যাতেই প্রস্তাবিত প্রদর্শনীর রূপরেখা উপস্থাপিত করা হবে। বট্যানিক্যাল সার্ভের সংগ্রহেও এই ধরনের বিপুল ছবির সংগ্রহ রয়েছে। সেই সংগ্রহকেও এই প্রদর্শনীতে সামিল করার চেষ্টা করা হচ্ছে যাতে ঔপনিবেশিক ভারতের প্রাকৃতিক ইতিহাকে একটি প্রদর্শনীর মধ্যে ধরা যায়। প্রাথমিক ভাবে এই প্রদর্শনীর নাম স্থির হয়েছে গার্ডেনস অফ এম্পায়ার। পরে অবশ্য তা বদল হতে পারে।

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000

Writer

SUMITRO BANDYOPADHYAY
Comment