পরভিনের কবিতায় ঈদ মানেই গভীর বেদনা
প্রিয়জন হয়তো আজ তাঁরই অপেক্ষায় রয়েছেন
- Total Shares
প্রতি বছর এক মাস উপবাসের পরে ঈদ-উল-ফিতর পালন করেন মুসলমানরা। এর তাৎপর্য হল আনন্দ, খুশি ও উৎসবমুখরতা। ‘ঈদ’ শব্দের আক্ষরিক অর্থই হল ‘এক আনন্দমুখর দিন’। যখন দেখা যায় যে কেউ হয়তো দুর্দশাগ্রস্ত, বিপাকে পড়েছেন, হতাশার শিকার কিংবা শোক-সন্তাপের মধ্যে রয়েছেন, উৎসবের মধ্যেও সেই তাঁদের সেই ভগ্নহৃদয়, মর্মবেদনা ও আকাঙ্ক্ষার কথা আবেগঘন ভাবে রূপকের মাধ্যমে তুলে ধরেছেন অনেক উর্দু কবিই।
অনেক কবিই ঈদের বর্ণনার মধ্য দিয়েই তাঁদের অন্তরের বেদনার কথা তুলে ধরেছেন। আমার মতে পরভিন শাকিরের লেখা অনবদ্য।
আনন্দঘন মুহুর্তে পরভিনের বেদনার কারণ আর আলাদা কতরে ব্যাখ্যা করার প্রয়োজন নেই। ছবি -- রয়টার
পরভিন হলেন উর্দু কবিদের মধ্যে বিখ্যাত এবং গত শতকের দ্বিতীয়ার্ধের মহিলা উর্দু কবিদের মধ্যে তিনিই ছিলেন সবচেয়ে জনপ্রিয়। তাঁর কবিতাগুলো ছিল এক বালিকার সেই অপূর্ণ সাধ নিয়ে, প্রতি বারই যার সম্পর্ক ভেঙে যায় অল্প কয়েকদিনের মধ্যেই।
‘চাঁদ রাত’ নামে একটি কবিতায় দারুণ ভাবে এমনই এক বালিকার কথা বর্ণনা করেছেন পরভিন, অল্প কিছুদিনের মধ্যেই যে তার প্রণয়ীর থেকে আলাদা হয়ে গেছে। এ ক্ষেত্রে ঈদের রীতিকে তিনি রূপক অর্থে ব্যবহার করেছেন। সাদারণ ভাবে ঈদের আগের রাতকেই ‘চাঁদ রাত’ বলা হয়। চান্দ্রমাসের এই নতুন চাঁদের উপরেই নির্ভর করে ঈদের উৎসব। এই চাঁদ সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এর উপরে নির্ভর করে একের পর এক উৎসব, যার সূচনা হয় ঈদ দিয়ে।
এই কবিতায় পরভিন লিখছেন:
গা-এ বরষ কী ঈদ কা দিন কেয়া আচ্ছা থা
চাঁদ কো দেখ কে কা চেহরা দেখা থা
(গত বছর ঈদের দিনটা দারুণ ছিল,
চাঁদের দিকে দেখার পরেই আমি ওর মুখটা দেখেছিলাম)
ফজা মেঁ কিয়াত কে লাহজে কি নর্মাহট থি
মাসুম আপনে রং মে ফৈজ কা মিসরা থা
(কিয়াতের সুরে যেন বাতাস ভরে গিয়েছিল,
পরিবেশ মুখরিত ছিল ফৈজের কবিতার রঙে রঙে)
দুয়াকে বে-আওয়াজ উলুহি লমহোঁ মেঁ
উয়ো লমহা ভি কিতনা দিলকাশ লমহা থা
(নীরব প্রার্থনার মধ্যে যে স্বর্গীয় মুহূর্ত ছিল
সেই মুহূর্তটা ছিল অত্যন্ত মনোমুগ্ধকর)
হাত উঠা কর যব আঁখো হি আঁখো মেঁ
উস নে মুঝকো আপনে রব সে মাঙ্গা থা
(হাত তুলে পার্থনার সময় চোখের ভাষায়
সে ঈশ্বরের কাছে আমার জন্যই প্রার্থনা করেছিল)
ফির মেরে চেহেরে কো হাতোঁ মে লে কর
কিতনে পেয়ার সে মেরা মাথা চুমা থা
(আমার মুখ তার দুই হাতে ধরে নিবিড় ভালোবাসায় আমার কপালে চুম্বন করেছিল)
তাঁর লেখনীর মাধ্যমে শেষ চাঁদ রাতের দৃশ্যও বর্ণনা করেছেন শাকির। তিনি আবার এই ঈদের দিনে ফিরে এসেছেন আর লিখছেন,
হাওয়া! কুছ আজ কি শব কা ভি অহল শুনা
কেয়া উও আপনি ছাত পর আজ আকেলা থা
(হে সমীরণ! আজকের কথা তুমি কিছু বলো...
ও কি তখন ছাদে একাই ছিল?)
ইয়া কোই মেরে জ্যায়সি সাথ থি আউর উস নে
চাঁদ কো দেখকে উসকা চেহরা দেখা থা?
(কিংবা আমার মতো কেউ কি ওর সঙ্গে ছিল... চাঁদ দেখার পরে ও তার দিকেই তাকিয়েছিল?)
পারভিন কোন বেদনার কথা যে বলছেন, সে কথা ব্যাখ্যা করার কোনও প্রয়োজন নেই। চাঁর দেখার আনন্দকে তিনি এই ভাবেই বর্ণনা করেছেন।
অন্য দিকে, তিনি দেখাচ্ছেন যে চাঁর দেখার পরে প্রেমিককে না দেখলে তাঁর ঈদ অসম্পূর্ণ রয়ে যাবে আবার উল্টো দিকে তিনি নিজেকেই সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছেন যে, হয়তো তাঁর প্রেমিক একাই আছেন এবং এই ঈদের দিনেও তাঁর অপেক্ষায় রয়েছেন।
এটা অবশ্যই উল্লেখ করতে হবে যে, অনেক উর্দু কবির মতো তিনিও এই দিনটিকে প্রিয়জনের জন্য কাতরতার দিন হিসাবে তুলে ধরেছেন। অষ্টাদশ শতকের উর্দু কবি নাজির আকবরবাদি লিখেছেন:
কিঁউ কর লাগেঁ না দিল মেঁ মেরে
হাসরতোঁ কে তীর দিন ঈদ কে ভি মুঝসে হুয়া
উও কানারা-গির ইস দর্দ কো উও সমঝে
জো ইসক কা আসির জিস ঈদ মে কি
ইয়ার সে মিলনা না হো নজির উসকে উপর তো
হ্যাইফ হ্যায় ঔর সদ-হজার আহ
(তীর কেন আমার হৃদয় বিদীর্ণ করছে না ঈদের দিনে তিনি নির্লিপ্তই রইলেন একমাত্র তাঁর প্রণয়ীই তাঁর বেদনা অনুভব করতে পারবেন ঈদের দিনে ভালোবাসার মানুষের দেখা পেলেন না এই দিনের জন্য রইল শুধুমাত্র কান্না-চোখের জল)