কী ভাবে লাভের মুখ দেখতে শুরু করলেন কুমোরটুলির শিল্পীরা

গণমাধ্যমে প্রচারের ফলেও অনেকটা সুবিধা হয়েছে

 |  2-minute read |   31-08-2018
  • Total Shares

দেখতে দেখতে এই পেশায় ৫৫ বছর হয়ে গেল। কুমোরটুলিতে অবশ্য বছর-পনেরো আছি। আমার জন্ম নদিয়ার কালিগঞ্জে। খুব ছোটবেলায় আমার মা-বাবা দুজনেই মারা যান। তারপরে আমি নদিয়ারই নবদ্বীপে চলে যাই মামার কাছে।

samir_10_083118052830.jpg৫৫ বছর ধরে মূর্তি গড়ছেন সমীর পাল (ছবি: সুবীর হালদার)

আমার মামা রমেন পাল খুব গুণী শিল্পী ছিলেন। তাঁর কাছে কাজ শিখতে থাকি। কাজের সূত্রে ছোট বয়সেই বিহার ও উত্তরপ্রদেশে গিয়েছি। সেখানেও মাটির কাজ করেছি। অন্য কাজও করেছি। বর্ধমান-আরামবাগ সেতুর দু-পাশে যে দুটো রাখালের মূর্তি ছিল, মোষের পিঠে বসে এক রাখাল বাঁশি বাজাচ্ছে, ওটা আমারই তৈরি। এখন সেটি আছে কিনা তা জানি না। সায়েন্স সিটিতে যে ডাইনোসরটি রয়েছে, সেটিও আমার তৈরি, তবে সাব-কন্ট্রাক্টে। আমার তো কোনও প্রথাগত শিক্ষা নেই, তাই সরকারি সরকারি কাজে যুক্ত হতে পারি না।

এ ভাবেই কাজ করে আসছিলাম। তারপরে টাকা জমিয়ে এখানে (কুমোরটুলি) একটা স্টুডিয়ো কিনে নিই, এখন আমার দুটো স্টুডিয়ো রয়েছে। আমার ছেলেও এই কাজে এখন আমাকে সাহয্য করে, তবে ওর এ সব কাজে কোনও আগ্রহ নেই। করতে হয় তাই করে।

samir_11_083118052935.jpgঅনেক জায়গা ঘুরে শেষ পর্যন্ত থিতু হয়েছেন কুমোরটুলিতে (ছবি: সুবীর হালদার)

এখানে বছর পনেরো কাজ করে দেখেছি, দুর্গার চাহিদা দিনে দিনে বাড়ছে। এই সময়টাতে আবার অনেক বেশি মজুরি দাবি করে কারিগর-শ্রমিকরা। তাই বৈশাখ মাসে যখন মজুরি কম থাকে, তখন আমি প্রতিমা তৈরির কাজ বেশ কিছুটা এগিয়ে রাখি। বৈশাখ মাসে ফুরনে হাজার তিনেক টাকায় দো-মেটে পর্যন্ত হয়ে যায়, আর এখন দিনে হাজার দুয়েক টাকা করে লাগে।

আজকাল ব্যবসা একটু ভালো চলছে, তার কারণ লোকের মানসিকতায় বদল। কয়েক বছর আগে পর্যন্তও পুজো কমিটিগুলো টাকা দিতে চাইত না, পুজোর পরে তাদের দেখা মিলত না। এখন অবশ্য কেউ ধার-বাকিতে কাজ করে না। বিভিন্ন গণমাধ্যমে এ নিয়ে বহুবার লেখালিখি হয়েছে, তার ফলেই হয়তো এই বদল। লোকের মানসিকতাও বদলেছে। এখন কাজ করে টাকা পাই। তাই কাজ করতেও ভালো লাগছে।

samir_13_083118053048.jpgকুমোরটুলিতে এখন দু'টি স্টুডিয়ো তাঁর (ছবি: সুবীর হালদার)

তবে সকলের সমস্যা মিটেছে এমন নয়। যারা খুব বেশি আর্থিক সঙ্কটে পড়েছিল, তাদের অনেকেই এখনও তার থেকে বার হতে পারেনি। তাই অনেকেরই সমস্যা এখনও রয়েই গেছে। টাকার অভাবে কেউ কেউ এখনও ঠিকমতো ব্যবসা করতে পারছেন না।

আগে দেখতাম এখানে জন্মাষ্টমীতে পুতুল বিক্রি হত, আজকাল তেমন আর দেখি না। তবে দুর্গার চাহিদা বেড়েছে। আমি মূলত সনাতনী স্টাইলের প্রতিমা তৈরি করি, একচালা হোক বা না হোক। তবে থিমের কাজ পেলেও করে থাকি। আমার তৈরি প্রতিমা দু-বার বিদেশে গেছে, দু-বারই স্কটল্যান্ডে।

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000

Writer

SAMIR PAL SAMIR PAL

Artist, Kumartuli

Comment