কলকাতায় আবার দোতলা বাস: সুবিধা কী, সমস্যা কোথায়?

শহরের ঐতিহ্যবাহী পরিবহণের মাধ্যমগুলো ক্রমেই অবলুপ্তির পথে

 |  3-minute read |   27-07-2018
  • Total Shares

বাসটা গোলপার্ক থেকে ছাড়ত। পোশাকি একটা নাম হয়তো ছিল। কিন্তু বড়রা বলতেন আড়াই তলা বাস। এ হেন নামকরণের কারণ, বাসগুলোর একতলার সামনের দিকের কিছুটা অংশ একতলার থেকে উঁচু। অনেকটা বাড়ির ম্যাজানাইন ফ্লোরের মতো। বর্তমানে কলকাতার রাস্তায় যে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ভলভো বাসগুলো চলে, সেই বাসগুলোর পিছনের অংশটা খানিকটা উঁচু থাকে। ওই আড়াই তলার বাসগুলোর একতলার সামনের অংশের উচ্চতা এর চাইতে অনেকটাই বেশি থাকত। এই বাসগুলোর ইঞ্জিন বাসের মধ্যে থাকত না। ওই বাসগুলোর সঙ্গে জোড়া ট্র্যাক্টর ট্রেলর বাসগুলোকে টেনে নিয়ে যেত।

আর, এই বাসগুলোর দোতলার একবারে সামনের আসনটিতে বসলে নিজেকে যেন রাজা মনে হত। সামান্য উচ্চতা থেকে আমার প্রিয় মহানগরীকে পর্যবেক্ষণ করা - এর স্বাদটাই যেন অন্যরকম ছিল। সত্যি সত্যিই নয়নাভিরাম সেই দৃশ্য। বাঁদিকের সামনের আসনে বসলে একটি সমস্যাও ছিল। পথ চলতে যদি কোনও গাছের সঙ্গে ঘষাঘষি লাগত তাহলে জানলা দিয়ে গলে সেই গাছের পাতা আপনার গায়ে পড়তে বাধ্য। তবে, সব মিলিয়ে সে ছিল এক অনন্য অভিজ্ঞতা।

body_072718031022.jpgইতিহাসের পাতা থেকে: সেই আড়াই তলা বাস

এল নাইন রুটে গোলপার্ক থেকে ডানলপ পর্যন্ত চলত সেই আড়াই তলা বাস। এ ছাড়া, সেই সময় গোলপার্ক থেকে ডানলপ অবধি আরও একটি বাস চলত - দরজা লাগানো এস-৯। আড়াই তলা বাসটি যেত সেন্ট্রাল এভিনিউ হয়ে এবং এস-৯ যেত শিয়ালদহ হয়ে। এই দুটি বাসের জন্য গোলপার্ক-সাদার্ন এভিনিউ ক্রসিংয়ে (রামকৃষ্ণ মিশনের উল্টোদিকে) একটি বাস শেডও করা হয়েছিল। সেই বাস শেড আজও আছে। এস-৯ রুটের বাস এখন যাদবপুর থেকে করুণাময়ী (সল্টলেক) অবধি চলে। কিন্তু চিরকালের জন্য ইতিহাসের পাতায় জায়গা করে নিয়েছে সেই আড়াইতলা বাসগুলো।

শুধু আড়াইতলা নয়, একটা সময় মহানগরীর মুখ্য আকর্ষণ ছিল দোতলা বাস। ইতিহাস ঘেঁটে দেখা যাচ্ছে, ১৯২৬ সালে ব্রিটিশরা কলকাতায় চালু করেছিল এই ডাবল ডেকার বাস। প্রায় আট দশক ধরে এই বাসগুলো রাজত্ব করেছে মহানগরীর বুকে। অবশেষে ২০০৫ সালে শহরের শেষ দোতলা বাসটি তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় সিএসটিসি। বর্তমান বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকাতে যে দোতলা বাসগুলো চলে তার সিংহভাগই এই শহরের বাতিল বাস।

bpdy1_072718031049.jpgশুরুর দিকের দোতলা বাস

বর্তমানে এক অদ্ভুত উভয় সঙ্কটের মধ্যে দিয়ে চলছে কলকাতা। ট্রাম, হলুদ ট্যাক্সি বা হাতে টানা রিক্সা - শহরের ঐতিহ্যবাহী পরিবহণের মাধ্যমগুলো ক্রমেই অবলুপ্তির পথে। তার জায়গায় উঠে আসছে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বাস, জনপ্রিয় হয়ে উঠছে ওলা-উবেরের মতো অ্যাপ ক্যাব পরিষেবাগুলো। শহর জুড়ে চলছে নতুন নতুন মেট্রো রুট সম্প্রসারণের কাজ। কিন্তু একই সঙ্গে নতুনের মাঝে পুরাতনগুলোকে ভুলতে চাইছে না এই শহর।        

তাই বোধহয় এই দোতলা বাস ফের চালু করবার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার। পরিবহণ দপ্তর মূলত পর্যটনের কথা ভেবে এই বাস চালু করবে। পরিকল্পনা অনুযায়ী আপাতত পর্যটনের জন্যেই চার-পাঁচটি দোতলা বাস চালু করা হবে। পর্যটকদের এই বাসে করে কলকাতার বিভিন্ন দর্শনীয় জায়গা ঘুরিয়ে দেখানোর জন্য এই বাস চালানো হবে। নিঃসন্দেহে, অনবদ্য উদ্যোগ। কিন্তু কয়েকটি প্রশ্ন রয়ে যাচ্ছে।

body3_072718031114.jpgএখন ঢাকার রাজপথ দাপিয়ে বেড়ায় এ বঙ্গের বাতিল দোতলা বাস

রচপাল সিং পর্যটন মন্ত্রী থাকার সময় এরকম একটা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। চিন থেকে উপরের ছাদখোলা দোতলা বাস নিয়ে এসে শহর পরিক্রমার চিন্তাভাবনা করা হয়েছিল। অনেকটা লন্ডনের সিটি ট্যুরের মতো। সেই সময় প্রশ্ন উদয় হয়েছিল কলকাতার মতো শহরে যেখানে বছরের বেশিরভাগ সময় প্রচন্ড গরম থাকে তার উপর মাস দুয়েক বর্ষা থাকে সেখানে এই পরিকল্পনা কতটা বাস্তব সম্মত হবে। শুধুমাত্র শীতকালীন পর্যটকদের কথা ভেবে এই বাস নামাতে গেলে অহেতুক ঝুঁকি হয়ে যাবে না তো?

আরও একটি কারণ ছিল। এই বাসগুলো শ্লথ গতিতে চলে, অনেকখানি জায়গা দখল করে থাকে এবং বাঁক নিতে অনেকটা বেশি জায়গা লাগে। পর্যটনের জন্য ব্যবহার করতে গেলে এই বাস নিয়ে উত্তর ও মধ্যে কলকাতায় যেতেই হবে যেখানে শহরের গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন স্থানগুলো রয়েছে। কর্মব্যস্ত সময় সেই জায়গাগুলোতে এই বাস নিয়ে যাওয়া কতটা যুক্তি সম্মত হবে? তার উপর শহর জুড়ে রয়েছে বিভিন্ন ব্রিজ আর নতুন নতুন ফ্লাইওভার। সব মিলিয়ে পর্যটন দপ্তরের কর্তারা পিছু হটতে বাধ্য হয়েছিলেন সেই সময়।

body2_072718031203.jpgআবার আসছে দোতলা বাস: অপেক্ষায় মহানগরী

আশা করি, পরিবহণ দপ্তর সেই সব বিষয় মাথায় রেখেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আগের বারের মতো পরিকল্পনা বাতিল করে দেবে না। খবর ঘোষণা হওয়ার পর শহরবাসীরা কিন্তু মুখিয়ে রয়েছেন।

আবার দোতলা বাসে চড়ে পুরানো সেই দিনের কথার স্মৃতি রোমন্থন করবে বলে।

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000

Writer

ARPIT BASU ARPIT BASU @virusfound007

Arpit Basu is the Special Correspondent with the India Today Group’s fact check team. With more than one-and-a-half decade's experience in print and digital media, he has reported on aviation, transport, crime, civic and human interests issues. His sting operation on how precious Aviation Turbine Fuel, meant for Kolkata airport, was pilfered and sold in local market as ‘white kerosene’ received widespread acclaim. Arpit has worked with reputed media houses like The Times of India and Hindustan Times and had received letter of appreciation for reporting during the Phalin cyclone in Odisha in 2013.

Comment