নবাবি হেঁসেলের কয়েকটি হারিয়ে যাওয়া সেই সব ব্যঞ্জন

বিভিন্ন জায়গার স্বল্প পরিচিত নবাবী ব্যঞ্জন বইটিতে জায়গা করে নিয়েছে

 |  3-minute read |   24-07-2018
  • Total Shares

স্থপতি ও শিল্পী মীরা আলির বই 'ডাইনিং উইথ দা নাবাবস' (লাস্টর প্রেস/রোলি বুকস)-এর  সব চেয়ে ভালো ব্যাপার হল রন্ধন সম্পর্কিত এটা একটি পাতলা বই যার মসৃণ ও চকচকে পাতায় নবীন চিত্রশিল্পী করম পুরীর ক্যামেরা দিয়ে তোলা বিভিন্ন জায়গার দারুণ সব ছবি রয়েছে।

ভারতের স্বাধীনতার পর যে সব করোদ রাজ্য সেসব রাজাদের হাত থেকে বেরিয়ে গিয়েছিল সে রকম দশটি করদ রাজ্যের নবাবী হেঁশেলের বেশ কয়েকটি রান্না বইটির মূল বিষয়বস্তু। বইটি একটু উল্টেপাল্টে ব্যঞ্জনগুলো দেখলে বোঝা যাবে যে তখনকার রাজপরিবারের মানুষজন যাঁদের কোনও অভাবই ছিল না তাঁরা রাজ্যের আর পাঁচজন সমৃদ্ধ প্রজাদের চেয়ে কিংবা আজকের যুগের বিত্তশালী মানুষের চেয়ে খুব একটা অন্যরকম খাবারদাবার খেতেন এমনটা নয়। তবে তফাৎটা ছিল তাঁদের আতিথেয়তা। তাঁদের আতিথেয়তা ছিল রাজসিক। এখনকার নবাবরা পুরোনোদিনের খাদ্যাভাসের প্রায় অনেককিছুই এখনও আগের মতো করেই ধরে রাখা চেষ্টা করছেন।

তাঁদের বাঞ্জনে একটা আঞ্চলিক ছোঁয়া রয়েছে যেটা তাঁদের সবকটি পদকে আরও অসাধারণ করে তোলে। আর্কটের নবাব যাঁরা আগে তামিলনাড়ুর উত্তরে অবস্থিত একটি ছোট অঞ্চলে রাজত্ব করতেন এবং যাঁরা রাষ্ট্রপতি প্রদত্ত সম্মান 'লাইন অফ প্রটোকলে' পঞ্চদশ স্থানের অধিকারী তাঁদের হেঁশেলের বিশেষ পদগুলোর মধ্যে কয়েকটি হল পুদুম (কিমা করা মাংসের গোলাকৃতি পিঠা যাতে ডিমের পুর দেওয়া থাকে), কিমা ভরে লাল বাইঙ্গন (টম্যাটোর মধ্যে কিমা করা মাংসের পুর), অন্ডে কা মিঠা ( ডিমের একটি মিষ্টি পদ) ও মাংসের বিরিয়ানি।

এঁরা যে টমেটোকে 'লাল বাইঙ্গন' বলতেন সেটা খুব একটা ভুল নয় কারণ টম্যাটো ও বেগুন একে অপরের সঙ্গে একটা যোগ রয়েছে। টম্যাটো ও বেগুন গাছের ফুল রাতে ফোটে। তাই এই দুটি সবজি একই শ্রেণীর।

nabab_body_072418030444.jpgপরিবারের সঙ্গে লেখিকা মীরা আলি

পাকিস্তানে ভাওয়ালপুর জায়গা যেটা বর্তমান নবাব সালাহ-উদ্দিন মহম্মদ খান যিনি পাকিস্তান সংসদের সদস্য তথা প্রাক্তন ক্রিকেটার ইমরান খানের রাজনৈতিক বন্ধু। ওখানকার একটি পদ যেটা এখন জায়গাটির একটি আঞ্চলিক পদ হিসেবে বিখ্যাত, পদটির নাম 'বাটা গোস্ত'। চোলিস্তান মরুভূমিতে বাটা বলে একটি ফুল জন্মায় যেটা এই পদটি রান্না করা জন্য ব্যবহার করা হয়। চোলিস্তানেই ডেরাওয়ার দুর্গ অবস্থিত, সেখানেই ওই পরিবারের বসবাস। ওখানকার নবাবি হেঁশেলের অন্যান্য পদগুলির মধ্যে আরও যে সব পদ বেশ জনপ্রিয় সেগুলো হল মাথ্যা (দই দিয়ে বেগুন পোড়া), আশরাফি পোলাও (মাংসের ছোটছোট বল বানিয়ে পোলাওটি রান্না করা হয়), চানা ডাল হালুয়া ও পেঠে (সাদা রঙের কুমড়া) কি ক্ষীর। এই পদগুলো অন্যান্য খাবারের দোকানেও পাওয়া যায় তবে এগুলো সব নবাবি খাবারদাবার কারণ পদগুলো নবাবি হেঁশেলের য়ে পদগুলি নবাবদের খানসামারা বানাতেন।

সাবেক খয়েরপুর রাজ্যটি সিন্ধু নদীর তীরে অবস্থিত, যে জায়গাটি অধুনা সিন্ধ প্রদেশে। আগে যদিও এই রাজ্যটি রাজপুতানার অন্তর্ভুক্ত ছিল। এখানকার একটি পদ যা পাঁঠার মাংসের সঙ্গে সজনে ডাঁটা দিয়ে বানানো হয় বেশ জনপ্রিয়। এর চেয়ে সাধারণ রান্না হয়তো আর কিছুই হয় না।

তবে অবশই ভিন স্বাদের পদও আছে যেমন মিঠে কোফতা (পদটিতে মাংসের ছোটছোট বল বানিয়ে প্লাম ফল ও আমের চাটনি ব্যবহার করে একটি মিষ্টি পদ রান্না করা হয়) এছাড়াও কাঠবাদাম দিয়ে বানানো হয় বাদাম রুটি যাতে  ঠান্ডা দুধ, মাখন ও গুঁড়ো করা চিনিও লাগে।

ভারতের কচ্ছের রানে অবস্থিত একটি স্বল্প পরিচিত অঞ্চল নাম জায়নাবাদে যখন গিয়েছিলাম তখন আমাদের ওখানকার বহু জনপ্রিয় এবং অসাধারণ কিছু আঞ্চলিক পদ পরিবেশন করা হয়েছিল যেমন জিল্ড গোস্ত। মাংসকে পাঁঠার চামড়ার মধ্যে পোরা হয় তারপর তাকে কয়লার আঁচে পুড়িয়ে ধীরে ধীরে রান্না করা হয়।

ওখানকার আরও একটি বিশেষ পদ হল 'হরা চানা'। বেগুনের সঙ্গে সবুজ ছোলার ডালের সঙ্গে রান্না করা হয়। শুধু তাই নয়, যেখানে ছোলার ডাল চাষ করা হয় সেই ক্ষেতে বসে যদি এই পদটি খাওয়া যায় তাহলে খাবার সময় ক্ষেতের  গন্ধটি রান্নাটি সঙ্গে মিশে গিয়ে পদটিকে একটা অন্য মাত্রা দেয়। গুজরাটের কাথিয়াওয়াড় উপদ্বীপে অবস্থিত কমধিয়া অঞ্চলে আমাদের দমপুক্ত পরিবেশন করা হয়েছিল (মুরগির মাংসকে শুষ্ক ফল বা ড্ৰাই ফ্রুটস-র দিয়ে রান্না করা হয়), হরে মসালে কি ছামনা (পদটিতে পমফ্রেট মাছকে কিছু সবুজ মসলা দিয়ে রান্না করা হয়), সুরাটি নবাবি বিরিয়ানি যা কয়লার আঁচে রান্না করা হয় এবং একটি মিষ্টি পদ নাম মুজাফফরি শোলা (পদটি চাল ও আনারস সহযোগে রান্না করা হয়)।

বইটি লিখতে গিয়ে মীরা আলি এবং করম পুরি শুধু ভারতেই নয় পাকিস্তানের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও ঘুরে বেড়িয়েছেন যে সব জায়গাগুলো সম্বন্ধে আমরা অনেকেই হয়তো খুব অল্প জানতাম। বইটি পড়ার আগে বাহাওয়ালপুর বলতে আমি নয়া দিল্লির বাহাওয়ালপুর ভবনই বুঝতাম। আমি জানতাম না যে এই জায়গাটির রাজনৈতিক ইতিহাস ছাড়াও একটা রন্ধনের ইতিহাস রয়েছে।

দারুণ সব ছবি ছাড়াও বইটির আর একটি বিশেষত হল বইটির প্রতিটি পাতায় স্বল্প পরিচিত সব ব্যঞ্জনকে খুব যত্ন সহকারে বিভিন্ন জায়গা থেকে সংগ্রহ করে এখানে প্রকাশ করা হয়েছে।

(সৌজন্যে মেল টুডে)

লেখাটি ইংরেজিতে পড়ুন

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000

Writer

SOURISH BHATTACHARYYA SOURISH BHATTACHARYYA @sourishb1963

A columnist for Mail Today and blogger at Indian Restaurant Spy

Comment