মন ভালো রাখতে শাকসবজি, বাদাম বা মটরশুঁটি জাতীয় খাবার খান
সাম্প্রতিক একটি গবেষণা বলছে মানসিক চাপের জেরে ক্যান্সার হওয়ার আশঙ্কা থাকে
- Total Shares
বিষণ্নতা এবং দীর্ঘস্থায়ী দৈনন্দিন জীবনে চাপ থাকলে তার প্রভাব যে শুধু মনের উপরেই পরে এমনটা নয় এর ফলে পেটের টানা সমস্যা (ইরিটেবেল বাওয়াল সিনড্রোম), কোষ্ঠকাঠিন্য, উচ্চ রক্তচাপ ও হৃৎপিণ্ডের নানা সমস্যা দেখা দেয়। শুধু তাই নয় সাম্প্রতিক একটি গবেষণা বলছে এর ফলে ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনাও থাকে। আমাদের দৈনন্দিন জীবনের একটা অঙ্গ হল চাপ আর বিষন্নতা হল একধরণের মানসিক অসুস্থতা এই দুটো বিষয়কে যে এখন আর খুব একটা হালকা ভাবে নেওয়া উচিত নয় এই তথ্যটি থেকে সেটা বেশ পরিষ্কার। গবেষণা এও বলছে যে চাপ থাকলে তা আমাদের শরীরের সবকটি কোষের উপর তার প্রভাব বিস্তার করে। আর কোষগুলি প্রভাবিত হওয়ার ফলেই হয়তো ক্যান্সার হওয়া আশঙ্কা থাকে।
কি ধরণের চাপ কম হতে পারে সেসব নিয়ে কয়েকদিন ধরেই ভাবনাচিন্তা করছিলাম। না, কোনও জাঙ্কফুড বা ফাস্টফুড খেয়ে নয় বরং এমন কিছু পুষ্টিকর খাবার রোজকার খাবারের তালিকায় রাখতে হবে যার মধ্যে এমন সব পুষ্টিগুণ রয়েছে যেগুলো খেলে আমাদের মন বেশ ভালো থাকে ও মানসিক চাপ কম হয়। এমন সব খাবার খান যাতে প্রচুর পরিমাণে লোহা ও ক্যালসিয়াম রয়েছে।
এমন অনেক পুষ্টিকর খাবার আছে যেগুলো খেলে মন ভালো থাকে। সেইসব খাবারের তালিকা এখানে লিখলাম:
১. এই তালিকায় সবচেয়ে প্রথমে আসে ম্যাগনেসিয়ামের নাম আসে। আমাদের মস্তিষ্কে যে রাসায়নিকটি আমাদের মন ভালো রাখতে সাহায্য করে সেই রাসায়নিক নাম হল সেরোটোনিন। ম্যাগনেসিয়াম এই রাসায়নিকটি উৎপাদন ও তার ঠিকঠাক কাজ চালিয়ে যেতে সহায়তা করে। তাই ম্যাগনেসিয়াম হল এমন একটি খনিজ যা মানসিক চাপ ও চাঞ্চল্য দূর করে। পাশাপাশি এই খনিজটি ঘুমে সহায়তা করে।
খুব সহজ। প্রত্যেকদিনের খাবারের তালিকায় এই খাবারগুলো মধ্যে অন্তত দুটি ধরণের খাবার রাখার চেষ্টা করুন - সতেজ শাকসবজি, কাজুবাদাম বা কাটবাদাম, কুমড়োর বীজ বা তিল, মটরশুটি জাতীয় খাবার বা সয়াবিন যখন তার খোলের মধ্যে থাকে সেগুলো খেতে পারেন যাকে ইংরেজিতে এডামামে বলা হয়, কয়েক ধরণের ডাল, মাছের মধ্যে যেমন ম্যাকেরেল, খোসা সমেত চাল, কলা, শুকনো ডুমুর ও ডার্ক চকোলেট।
২. প্রচুর পরিমাণে অ্যামিনো অ্যাসিড সম্পন্ন এই তিনটি খাবার খান:
খাবার থেকে আমরা যে ট্রাইপ্টোফ্যন পাই তা মস্তিষ্কে গিয়ে সেরোটোনিনে পরিবর্তিত হয়।
ডোপামাইন, নোরেপিনেফরিন এবং এপিনেফ্রিন মস্তিষ্কের এই তিনটি নিউরোট্রান্সমিটার যেগুলো ঠিকঠাক থাকলে আমাদের মন ভালো থাকে সেগুলোর সঠিক উৎপাদনের সহায়তা করে টেরোসিন।
তাই প্রচুর পরিমাণে দুগ্ধ যত দ্রব্য, বাদাম, পোল্ট্রি, ও ডিম খান। তাই প্রাতঃভোজে ডিম খেলে সারাদিন মন ভালো থাকে আর রাতে শুতে যাওয়ার আগে দুধ খেলে সারাদিনে চাপ অনেক দূর হয় আর ঘুম ভালো হয়।
যেসব খাবার যেমন চা যাতে থায়ামিন ও অ্যামিনো অ্যাসিড রয়েছে সেই সব ধরণের খাবারদাবার বেশি করে খান এতে মন ভালো থাকে ও শরীরের আরাম হয়।
৩. ফ্রি রেডিক্যাল আমাদের শরীরর বিভিন্ন ক্ষতি করে তাই এমন খাবার খান যাতে রয়েছে ওমেগা-৩ স্নেহপদার্থ। এছাড়া মস্তিষ্কের যে অংশ আমাদের মন-মেজাজ ভালো ও সতেজ রাখতে সাহায্য করে সেই অংশকে ভালো রাখে ওমেগা-৩ স্নেহপদার্থ।
এর অভাবে ক্লান্তি দেখা দেয় এবং মন-মেজাজও ভালো থাকে না। তাই মাছের মধ্যে যেগুলো ওমেগা-৩ সম্পন্ন যেমন স্যালমন, ম্যাকরেল ও টুনা খান।
এছাড়া নিরামিষের মধ্যে আখরোট, তিল ও তিসির বীজ জাতীয় খাবার খান।
৪. আপনি যদি রোজ সকালে উষ্ণ গরম জলে একটু লেবুর রস ফেলে খান তাহলে জেনে রাখুন লেবুর রসে যে ভিটামিন সি রয়েছে সেটা আমাদের মন ভালো রাখে কারণ ভিটামিন সি তে সেরোটোনিন রয়েছে।
পেয়ারা, আমলা, স্ট্রবেরি, কিউই ও বিভিন্ন টক জাতীয় ফল যেমন কমলালেবুতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি রয়েছে।
৫. সূর্যের রশ্মি থেকে ভিটামিন ডি পাওয়া যায় বলে ইংরেজিতে এটিকে 'সানসাইন ভিটামিন' বলা হয়ে থাকে। এই ভিটামিনটি যেমন আমাদের শরীর ও ত্বকের পক্ষে ভালো তেমনই এই ভিটামিনটি আমাদের মনকেও ভালো রাখে।
তাই যদি কখনও মন খারাপ লাগে তাহলে ভিটামিন ডি মন খারাপ সারিয়ে দিতে পারে। তাই প্রত্যেকদিন চেষ্টা করুন ২০ থেকে ৩০ মিনিট মতো সূর্যের আলোয় ঘোরাঘুরি করুন।
৬. অবশেষে ভিটামিন বি কমপ্লেক্স যেমন ভিটামিন বি১ (থায়ামিন), ভিটামিন বি৩ (নায়াসিন), বি৪ (কোলাইন), ভিটামিন বি৬ (পাইরিডক্সিন), ভিটামিন বি৯ (ফোলেট বা ফলিক অ্যাসিড) এবং ভিটামিন বি ১২ (কোবালামিন) মনকে আনন্দিত রাখতে অতন্ত্য প্রয়োজনীয়।
বি১ মানসিক চাপ দূর করে, বি৩ বিষন্নতা কাটাতে সহায়তা করে, বি৬ সেরোটোনিন ও মোরেপিনেফরীন উৎপাদনে সহায়তা করে যার ঠিকঠাক উৎপাদন না হলে আমাদের মনের উপর প্রভাব ফেলে এবং ভিটামিন বি১২ ও ভিটামিন বি৯ একত্রে মানসিক চাপ কম করে ও মনকে উৎফুল্ল রাখে।
ভিটামিন বি৯-এর অভাব হওয়ার ফলে বিষন্নতা আসতে পারে এবং ভিটামিন বি৪-এর অভাবে মনোযোগের অভাব ও স্মৃতিশক্তি কম হয়ে যেতে পারে। তাই এমন খাবার খান যাতে প্রচুর পরিমাণে।
তাই সেইসব খাবার খান যা আপনার মন ভালো রাখবে ও চিত্ত বৈকল্য দেখা দেবে না।
লেখাটি ইংরেজিতে পড়ুন