দীপাবলি: আলোর উৎসব কী ভাবে হয়ে গেল বাজি ও বারুদের উৎসব?
চিন থেকে মধ্যএশিয়া হয়ে কী ভাবে বারুদ এল ভারতে
- Total Shares
অনেকে বলেন যে যখন এই বাজির প্রচলন হয়েছিল তখন তার একটি বৈজ্ঞানিক ভিত্তি ছিল। প্রশ্ন হল, এ ব্যাপারে এখনও পর্যন্ত কেউ কি কোনও গবেষণাপত্র জমা করেছেন? বিজ্ঞান কতকগুলো রীতিনীতি মেনে চলে, যার উপরে তা প্রতিষ্ঠিত।
অতীতে আমাদের দেশে কালীপুজোর আগের রাতে চোদ্দোপ্রদীপ দেওয়া হত। মূলত প্রদীপ জ্বলানো হত। দীপাবলি হল আলোর উৎসব, বারদের উৎসবও নয়, শব্দের উৎসবও নয়। যদি অতীত কাল থেকে ঐতিহ্য বিচার করা হয় তা হলে দেখা যাবে যে এককালে শুধুমাত্র প্রদীপ জ্বালানো হত। প্রদীপের আলোকেই আলোকিত করা হত।
দীপাবলি আলোর উৎসব, বাজি ও বারুদের উৎসব নয় (ছবি: রয়টার্স)
সেই আলোর আধুনীকিকরণে কী হতে পারে? প্রদীপের আধুনীকিকরণে টুনিবাল্ব হতে পারে, অন্য নানারকম আলো হতে পারে।
বাজিশিল্প প্রথম আসে চিন থেকে। বারুদের আবিষ্কার হয়েছে চিনদেশে। সেখান থেকেই এই শিল্প অন্য জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে। এটিকে শখ মেটানোর একটি উপাদান হিসাবে গ্রহণ করে নেওয়া হয়। আমাদের বিভিন্ন উৎসবের মধ্যে ধীরে ধীরে বাজির ব্যবহার বাড়তে থাকে। এর বিপণন হতে আরম্ভ করে।
একেবারে গোড়ার দিকে চিনে বিভিন্ন উৎসবে বাজি পোড়ানোর রীতি ছিল। পরে রাজা-মহারাজাদের উৎসবে এই ধরনের বাজি পোড়ানো শুরু হয়। যেমন জয়পুরের মহারাজা যখন উৎসব করেছিলেন তখন বিদেশ থেকে বাজি আনিয়েছিলেন।
আরও পরে রাজা-মহারাজারা নিজেরা বাজি তৈরির কারিগর রাখতে শুরু করলেন। কোচবিহারের মহারাজাও বাজির কারিগর রেখেছিলেন। আমি যখন কোচবিহারে গেছি তখন রাজপরিবারের যাঁরা বাজির কারিগর ছিলেন তাঁদের পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছি।
এখন অনেক উৎসবেই বাজি পোড়ানো হয় (ছবি: রয়টার্স)
আরও অনেক পরে সর্বসাধারণ এর মধ্যে আসতে আরম্ভ করে। ধীরে ধীরে আমাদের সংস্কৃতির মধ্যে বাজি আসতে শুরু করল। এখন তো বিবাহ-উপনয়ন সবেতেই বাজির ব্যবহার করা হচ্ছে। এটা করতে করতে এমন একটা জায়গায় পৌঁছেছে যে আমার আনন্দ অপরের দুঃখের কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
যদি কালীপুজোর কথা ধরা হয় কিংবা অন্য কোনও ধর্মের কথা ধরা হয় যেখানে বাজি পোড়ানো হয়, সেই সবই একসময় ছিল প্রদীপের আলো। বাজির আলো বলতে কিছু ছিল না। আমাদের সমাজে ধীরে ধীরে আনন্দ করার পদ্ধতি বদলাচ্ছে।
চিনে যে বারুদ আবিষ্কৃত হয়েছে সে কথা পরীক্ষিত সত্য। এখান থেকে অনেকেই চিনে যেতেন এই বারুদের বিষয়টিকে জানার জন্য, বোঝার জন্য।
চেঙ্গিস খানরা বারুদের ব্যবহার শিখতে আরম্ভ করেন। চিন থেকে বারুদের ব্যবহার মধ্যএশিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে। যার ফলে দেখা যায়, মধ্যএশিয়া থেকে আমাদের এখানে যাঁরা ঢুকেছিলেন অর্থাৎ বাবরই প্রথম কামানের ব্যবহার করেন, বারুদের ব্যবহার করেন।
বারুদের উৎপত্তি চিনে, বাজি পোড়ানো হত সে দেশের উৎসবে (ছবি: রয়টার্স)
আমাদের এখানে যুদ্ধক্ষেত্রে বারুদের ব্যবহার হয়েছে বাবরের সময়। তারপরে দেশীয় রাজাদের মধ্যে তা ছড়িয়ে পড়ল। আজ যে হাউই বাজি ব্যবহার করা হয়, তা আসলে ক্ষেপণাস্ত্রের ক্ষুদ্র সংস্করণ, রকেটের প্রাথমিক স্তর। টিপু সুলতান প্রথম যুদ্ধে ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করেছিলেন।
অর্থাৎ কালীপুজোর সঙ্গে ও দীপাবলির সঙ্গে আলোর সম্পর্ক থাকলেও বাজির সম্পর্ক ছিল না কোনও দিনই।