আমার শীতকালের দার্জিলিংটা: ঝকঝকে আকাশ, বড়দিনের সাজ আর দিগন্ত বিস্তৃত কাঞ্চনজঙ্ঘা

দার্জিলিং যে কতবার হল তা গোনার প্রয়োজন হয়নি, কারণ প্রতিবারই নতুন করে ধরা দেয় আমার প্রেয়সী

 |  2-minute read |   20-11-2018
  • Total Shares

নিয়মমাফিক বৃদ্ধ হতে হয় সকলকেই। তাই ভাবি হব তো আমিও একদিন। পৃথিবীর সমস্ত রং মুছে ছানি পড়বে আমার চোখেও। তখন চোখ বুঝে দেখতে হবে জগৎকে। পুরোনো স্মৃতির ছবি সতেজ হয়ে উঠবে বৃদ্ধের কল্পনাতে, অনেকটা ওয়ার্ডসওয়ার্থের মতো। যেমন করে পিছনে ফেলে আসা দিনগুলো আবার দেখেছিলেন আর পৃথিবী পেয়েছিল অসাধারণ কিছু কবিতা। আমি তো আর কবিতা লিখতে পারি না, তবে পুরোনো স্মৃতি রোমন্থনে তো আর কোনও বাধা নেই।

আমি জানি সেই সময়ে আমি কী দেখতে পাব। গাড়ির ভিতর থেকে জানলার কাচে হাত ঘোরাতেই বাইরের ডানদিকের ছোট টয়ট্রেনের লাইন আমার সঙ্গেই এগোচ্ছে, বাঁদিকে ঝাউ আর পাইনের ফাঁক থেকেই দেখা যাচ্ছে গভীর খাদ। হটাৎ করে এতো কুয়াশা বেড়ে যাওয়াতেই বুঝলাম 'ঘুম' আসছে। মানে, আমার ঘুম আসছে না, এমনিতেই পাহাড় আমায় ঘুমোতে দেয় না।

দার্জিলিং শহর আর মাত্র কিছুক্ষণের পথ। দার্জিলিং যে কতবার হল গুণিনি কোনও দিন, গোনার প্রয়োজনও হয়নি। কারণ প্রতিবারই নতুন করে ধরা দেয় আমার প্রেয়সী। তোমায় নতুন করে দেখব বলে আসি বারেবারে।

আমি বহু বছর ধরেই দার্জিলিং যাতায়াত করি একটু সময় পেলেই, তাই বছরের বিভিন্ন সময়তেই আসা হয়। তার মধ্যে আমার সবচেয়ে প্রিয় সময় হল শীত। ডিসেম্বরের শেষের দিক থেকে ফেব্রুয়ারির শুরুর সময়টায় দার্জিলিঙের যেমন রূপ তেমনটা বোধহয় অন্য সময় হয় না।

body1_112018061250.jpgশীতকালের দার্জিলিং মানেই পরিষ্কার আকাশ, কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখার হাতছানি [ছবি: এপি]

শহর তো নিজের মতোই বেড়ে ওঠে দিনদিন। একসময় কিশোর থেকে যুবক থেকে বৃদ্ধ। কংক্রিটের প্লাস্টারগুলো যেন বার্ধক্যের নিশান। তা সত্বেও যখন বড়দিনের সাজে সেজে ওঠে ম্যাল এবং ছোট বড় রেস্তোরাঁ ও হোটেলগুলো তখন মনে হয় স্বর্গ যদি কোথাও থেকে থাকে সেটা এখানেই।

কেভেন্টার্সের ছাঁদে বসে প্রচণ্ড শীতে হট চকোলেট খেতে খেতে পুরো শহরটাকে দেখা যায়। পাহাড়ের ঢালের বাড়িগুলোর আলো আর শহরের বড়দিনের জন্য সাজানো আলো মিলেমিশে এক হয়ে যায়। মনে হয় একটা বড় চাদরের উপর অসংখ্য আলোকিত বিন্দু, ঠিক যেন আকাশগঙ্গায় অসংখ্য বিভিন্ন রঙের নক্ষত্র টিমটিম করে জ্বলছে। সেই দৃশ্য জন্মান্তরেও ভোলার নয়।

শীতের সময়ে দার্জিলিঙের আরও একটি বড় সুবিধা হল ঝকঝকে আকাশ। কুয়াশা কম থাকায় কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখার সম্ভাবনা বেড়ে যায় অনেক গুণ। ঠান্ডা বেশ ভালোই থাকে, তার সঙ্গে থাকে ঠান্ডা হাওয়াও। তবে বরফ পড়ার সম্ভাবনা খুবই কম। অনেকটা ভাগ্যের ব্যাপার।

body_112018061355.jpgতুষারপাত দেখতে যেতে হবে দার্জিলিংয়ের উত্তরপশ্চিমে অবস্থিত সান্দাকফুতে [সৌজন্যে: টুইটার]

তবে তার সহজ সমাধান হল উত্তর পশ্চিম দার্জিলিঙে চলে যাওয়া। দার্জিলিং শহর থেকে মাত্র কয়েকঘণ্টা সফর করেই চলে যাওয়া যায় পশ্চিমবঙ্গের উচ্চতম স্থান সান্দাকফুতে, সেখানে ওই সময়ে বরফ থাকবেই। সিঙ্গালিলা জাতীয় উদ্যানের মধ্যে দিয়ে যাওয়ার পথটি সম্পূর্ণ নৈসর্গিক। পাহাড়ে ঢালের গাছের উপর বরফ এবং তার উপর আকাশ জুড়ে সম্পূর্ণ কাঞ্চনজঙ্ঘার বিস্তার যে কোনও বেরসিক মানুষকেও ভাবুক বানিয়ে ফেলতে পারে। যাওয়ার পথে মেঘমা বলে জায়গাতে গাড়িতে মেঘও ঢুকে পড়ে।

এত সব অভিজ্ঞতা তো আছেই তার সঙ্গে আছে শহর ছেড়ে দার্জিলিঙের গ্রামের স্বাদ। কেউ কারুর চেয়ে কম নয়। যেমন শহর তার গরিমায় বিরাজ করছে, তেমনই গ্রাম আপন করে নেয় সকলকে।

তাই তো জানি, যখন বৃদ্ধাবস্থায় চাওয়া পাওয়ার উর্ধ্বে গিয়ে মন উদাসীন,

"স্মৃতির উঠোন থেকে খুঁজে আনবে সেই ফিলিংটা,আমার শীতকালের দার্জিলিংটা।"

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000

Writer

DEBASISH DEY DEBASISH DEY

The writer is a travel freak, an ardent traveler and a passionate tour operator. Owner of Golla Chut.

Comment