অস্থি-নিদর্শনে রং করায় ক্ষতি হয়েছে, তবে এখনও তা আগের অবস্থায় ফেরানো সম্ভব

প্রাণিবিজ্ঞান সর্বেক্ষণের উচিৎ, দ্রুত এনআরএলসি-র সঙ্গে যোগাযোগ করা

 |  3-minute read |   09-06-2018
  • Total Shares

দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পরে ভারতীয় জাদুঘরের যে সব বীথিকা ২৫ বৈশাখ নতুন করে খুলেছে দর্শকদের জন্য, সেই বীথিকা খোলার পরেই অভিযোগ ও বিতর্ক শুরু হয়েছে। অভিযোগ হল, প্রাণিবিজ্ঞান বীথিকায় যে সব হাড় রাখা আছে, সেগুলি রং করা হয়েছে এলামাটি (yellow ochre) ও বার্নিস দিয়ে। তার পরেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করে, তা হলে এই হাড়গুলোর কতটা ক্ষতি হল, এই ক্ষতিপূরণ সম্ভব নাকি রামপূর্বা লায়ন ক্যাপিটালের মতো এই ক্ষতিও অপূরণীয়।

প্রথমেই জানিয়ে রাখা দরকার, প্রাণিবিজ্ঞান বীথিকায় যে নিদর্শনগুলি রয়েছে, ভারতীয় জাদুঘরের সঙ্গে সেগুলির কোনও সম্পর্ক নেই, এগুলি একই ভবনে আছে, ব্যস এইটকুই। এগুলির সংরক্ষণ ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব ভারতীয় প্রাণিবিজ্ঞান সর্বেক্ষণ বা জুলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার। আর এই যে এলামাটি ও বার্নিস মাখানোর অভিযোগ উঠেছে, সেই অভিযোগ সত্যি হলে এই পুরো দায়টিই ভারতীয় প্রাণিবিজ্ঞান সর্বেক্ষণের।

body_human_060918085639.jpgমানুষ ও কাছাকাছি গোত্রের প্রাণীদের কঙ্কাল

উজ্জ্বল করার জন্যই যে এমন কাণ্ড ঘটানো হয়েছে, তা একান্তে স্বীকার করে নিয়েছেন প্রাণিবিজ্ঞান সর্বেক্ষণের এক কর্তা। তবে এমন ঘটনা আগে ঘটেনি বলে ঠিক কতটা ক্ষতি হয়েছে, তা সময়ই বলবে গোছের মন্তব্য করে তাঁরা বিষয়টি এগিয়ে গিয়েছেন। তবে সংরক্ষণের ব্যাপারে এ দেশের সর্বোচ্চ সংস্থা লখনউয়ের রাষ্ট্রীয় সাংস্কৃতিক সম্পদা সংরক্ষণ অনুসন্ধানশালা বা সংক্ষেপে এনআরএলসি-র এক বিজ্ঞানী স্বীকার করে নিয়েছেন, এমন কাণ্ড ঘটে থাকলে তা ক্ষতি তো বটেই, যদিও নমুনা চাক্ষুস না করে তিনি এ ব্যাপারে সরাসরি কোনও মন্তব্য করতে চাননি।

body2_060918085809.jpg১৭৫৮-এ সংগৃহীত বাঘের কঙ্কাল

এনআরএলসি-র বিজ্ঞানী বি এস রাওয়ের মত হল, “নমুনা না দেখে এ ব্যাপারে কিছু বলা সম্ভব নয়, তবে যদি কোনও রং করা হয়ে থাকে তা হলে ওই সব হাড়ের আয়ু কমে যাবে। কতটা ক্ষতি হয়েছে তা নমুনা পরীক্ষা না করে বলা যাবে না।” যদি এমন করা হয়ে থাকে, তা হলে কি ওই হাড় আবার আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব? রাও বলেন, “কিছুটা তো সম্ভব, তবে কতটা সম্ভব তা নির্ভর করছে ঠিক কী রাসায়নিক প্রয়োগ করা হয়েছে তার উপরে।”

body3_060918085918.jpgকৃষ্ণসার হরিণের কঙ্কাল, ১৭৮০ সালে সংগৃহীত

যে কোনও প্রাণীর হাড় হল ফাঁপা এবং সচ্ছিদ্র, অর্থাৎ অতি সূক্ষ্ম ছিদ্র (porus) থাকে। রং করলে সেই ছিদ্র বুজে যায়। তাতেই আয়ু কমে যাওয়ার আশঙ্কা। তা ছাড়া আসল অস্থিতে রং করলে তা ভালো দেখাক বা মন্দ, আসল রং দেখা থেকে বঞ্চিত হন দর্শকরা।

body4_060918090428.jpgনর্দার্ন ফার শীলের খুলি

এবার প্রশ্ন হল, এই সব প্রাণীর অস্থি নষ্ট হয়ে গেলে ঠিক কতটা ক্ষতি।

নীলতিমির এমন কঙ্কাল ভূ-ভারতে নেই। এর এক টুকরো পেলে অনেক জাদুঘরই বর্তে যাবে। হাতির যে ধরনের কঙ্কাল এখানে রয়েছে তাও দুষ্প্রাপ্য। তা ছাড়া বন্যপ্রাণ সংরক্ষণ আইন ও অন্য যে সব আইন হয়েছে, তার জেরে এই বিথিকায় যে ধরনের প্রাণীর নমুনা ও দেহাংশ রয়েছে সেই সব ধরনের প্রাণীর নমুনা শেষ সংগ্রহ করা হয়েছে ১৯৭২ সাল বা তার আগে। তাই এখানে প্রায় সব নমুনাই এখন দুষ্প্রাপ্য।

body_new_060918091144.jpg

হামাদ্রিয়াস বেবুনের কঙ্কাল

সবে এমন রং করা হয়েছে। তাই যদি কোনও ক্ষতি হয়েও থাকে, এখনও তা বিশাল আকার ধারণ করেনি। তাই প্রাণিবিজ্ঞান সর্বেক্ষণের উচিৎ, যত দ্রুত সম্ভব এনআরএলসি-র সঙ্গে যোগাযোগ করে এই সব নিদর্শন যত দ্রুত সম্ভব আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা।

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000

Writer

SUMITRO BANDYOPADHYAY
Comment