ট্রাম শুধু একটা গাড়ি নয়, কলকাতার ঐতিহ্য আবেগ ও ইতিহাসের চলমান সাক্ষী
সকলেই হয়ত মানবেন যে, কলকাতা ও ট্রাম যেন সমার্থক
- Total Shares
ইতিহাসচর্চায় আমরা চিরকালই উদাসীন, ঐতিহ্য রক্ষার ক্ষেত্রেও এ কথা খাটে। এই উদাসীনতা দেখে খুব কষ্ট হত। সত্যি কথা বলতে কী, এখন আর কষ্ট হয় না, রাগও হয় না, এক কথায় খারাপ লাগে। আরও খারাপ লাগে, এমন দিনে, যখন বিশ্বের ঐতিহ্য নিয়ে হইচই হচ্ছে, তখনও ট্রাম রয়ে যাচ্ছে অবহেলিতই।
কলকাতার গণপরিবহণ নিয়ে কাজ করতে গিয়ে একটা ব্যাপার সম্যক ভাবে বুঝতে পেরেছি-- সাবেক ভারতে, মানে ভারতবর্ষে, প্রয়োজনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে যানবাহনের পরিবর্তন যত না হয়েছে, তার চেয়ে ঢের বেশি পরিবর্তন করিয়ে দেওয়া হয়েছে। তার জলজ্যান্ত উদাহরণ হচ্ছে কলকাতার ট্রাম। কলকাতার ট্রামের মতো এক বিশাল, বিশ্রুত, সমাদ্রিত এবং এমন এক সুন্দর ও জীবন্ত একটা গণপরিবহণ ব্যবস্থাকে কণ্ঠরোধ করে হত্যা করার চক্রান্ত বহুজনের, বহুদিনের। তবে কিনা সাবেক কলকাতা শহরের আমজনতার মননে, জীবনযাপনে এমন ভাবে এই ট্রাম জড়িয়ে ছিল এবং আছে, তাই একে মন থেকে মুছে ফেলা যাবে না। তাই একটা কথা মনে রাখতে হবে, এটা শুধু ধ্বংসের হাত থেকে বেঁচে যাওয়া স্মারক নয়, এর ঐতিহ্যগত মূল্য আলাদা। চালু হওয়ার প্রথম দিন থেকেই এই যান কলকাতার জন্য নিরবচ্ছিন্ন ভাবে পরিষেবা দিয়ে আসছে।
শহরের প্রথম গণপরিবহণ এই ট্রামই (ছবি সৌজন্য: লেখক)
এই ট্রামের বেড়ে ওঠার সঙ্গে মানুষের বেশ একটা মিল ছিল। মানুষ যেমন ছোট থেকে বড় হয়, হাত ধরে হাঁটতে শেখে, নিজের পায়ে দাঁড়ায়, সেই রকম। মানুষ বৃদ্ধ হয়, তার মৃত্যুও হয়, কিন্তু ট্রাম তো আর পুরোপুরি মানুষ নয়, তাই স্টিম ইঞ্জিন থেকে ধীরে ধীরে তার যে ভাবে উত্তরণ ঘটেছে, সেটা ট্রামের ক্ষেত্রে অনেক আগে ঘটেছে। আমি মনে করি এবং সকলেই হয়ত মানবেন যে, কলকাতা ও ট্রাম যেন সমার্থক, এ নিয়ে বিস্তর লেখালিখি হয়েছে এবং সেই সব লেখা বাঙালির কাছে স্বীকৃত।
অনেকে অনেক কিছু বলছেন, কিন্তু বলা ও কার্ষক্ষেত্রে রূপায়ণের মধ্যে বিস্তর ফারাক আছে। এখন এমন একটি পরিবহণ ব্যবস্থাকে নষ্ট করে দেওয়া হচ্ছে যা আমাদের এই শহরে রেলের পরেই ছিল। এখন একে অমর্যাদা করা হচ্ছে। একই সঙ্গে বাঙালি সমাজের সঙ্গে ট্রামের সেই একাত্ববোধকেও অস্বীকার করা হচ্ছে।
ট্রাম আসার আগে ভারতে গণপরিবহণের কোনও ধারনাই ছিল না। সে দিক থেকে বিচার করলেও এর ঐতিহ্যগত মূল্য অপরিসীম।