‘বায়োস্কোপওয়ালা’ হাসায় আবার কাঁদায়ও
মানুষ তাঁর ভালো স্মৃতিগুলো মনে করে জীবনের দুঃখগুলো না পাওয়াগুলো ভুলে থাকার চেষ্টা করে
- Total Shares
স্মৃতি কখনও আনন্দ দেয় আবার কখনও বেদনাও দেয়। পরিচালক দেব মেধেকর প্রথম ছায়াছবি 'বায়োস্কোপওয়ালা'-য় স্মৃতির একটা বিরাট ভূমিকা রয়েছে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা জনপ্রিয় ছোট গল্প 'কাবুলিওয়ালা' থেকে অনুপ্রাণিত তাঁর ছায়াছবিটি।
৯৫ মিনিটের সিনেমায় স্মৃতি বারবার বিভিন্ন ভাবে ফিরে এসেছে, কখনও এসেছে চিঠি, নথিপত্র, বিশেষ কোনও যন্ত্র, ছবি অথবা চলমান কিছু ছবির রূপে। সিনেমার চরিত্রগুলোকে যেন স্মৃতিগুলোই নিয়ন্ত্রিত করেছে।
ছবিতে মিনি বসু (গীতাঞ্জলি থাপা) একজন চিত্রনির্মাতা যাঁর সঙ্গে তাঁর ফটোগ্রাফার বাবার (আদিল হুসেন)-একটা তিক্ত সম্পর্ক ছিল। সিনেমায় অবশ্য মেধেকর বাবা-মেয়ের সম্পর্কের গভীরতা তেমন একটা দেখাননি। একটি বিমান দুর্ঘটনায় মিনি তাঁর বাবাকে হারিয়ে কলকাতায় ফিরে আসে। কলকাতায় ফিরে মিনি বাবার স্মৃতি আঁকড়ে ধরে সঙ্গে সঙ্গে তাঁর সেই মানুষটার কথাও মনে পড়ে যে মিনির শৈশবের অনেকটা জুরে ছিল।
রহমত ভাই বা বায়োস্কোপওয়ালা (ড্যানি ডেনজংপা) কাবুল ছেড়ে এ দেশে চলে আসে। রহমতের কাছে ছিল এমন একটা যন্ত্র যাতে হিন্দি ও হলিউডের ক্লাসিক সিনেমাগুলো অনেক ছবি ও অংশ ভেসে উঠত। আর এই যন্ত্রটা নিয়ে এই শহরের পাড়ায় পাড়ায় ঘুরে তিনি কচিকাঁচাদের আনন্দ দিতেন।
“সে আমাকে শিখিয়েছিল কী ভাবে গল্প বলতে হয়, কী ভাবে একটা গল্পকে তৈরি করতে হয়"
“সে আমাকে শিখিয়েছিল কী ভাবে গল্প বলতে হয়, কী ভাবে একটা গল্পকে তৈরি করতে হয়।" মিনি তাঁর ফ্রেঞ্চ সঙ্গীকে বলে যে রহমতের খোঁজ করতে গিয়ে সে জানতে পারে যে রহমত এখানে আসার প্রায় দু'দশক পরে তাঁর নিজের দেশে ফিরে গিয়েছিল। এখন সে আলজাইমার্স রোগে আক্রান্ত হয় ওখানকার একটি হাসপাতালে শয্যাশায়ী। এরপর মিনি বায়োস্কোপওয়ালার মতোই গল্প বলতে শুরু করে। সবার থেকে মিনি বায়োস্কোপওয়ালার জীবনের অনেক গল্প জানতে পেরে ও সেই গল্পই সে সবাইকে বলে।
বিভিন্ন পরিচিত ও অপরিচিত লোকের থেকে মিনির অনেক পুরোনো কথা জানতে পারে সঙ্গে সঙ্গে মিনির অনেক স্মৃতি মনে পড়তে থাকে। এই স্মৃতি তাকে বেদনা দেয়। আফগানিস্তানের একটি সিনেমা হলের মালিক ছিল রহমত। তিনি একজন বায়োস্কোপওয়ালা হবেন বলে সবকিছু ছেড়ে দিয়েছিলেন। তিনি অত্যন্ত দয়ালু ও ভালো মানুষ ছিলেন। তাঁর একটি কন্যা সন্তানও ছিল। তিনি সেসব উপেক্ষা করে দেশ ছেড়েছিলেন।
সিনেমায় অন্যান্য চরিত্রে বিভিন্ন অভিনেতাদের অভিনয় যথেষ্ট ভালো তাই এই চরিত্রগুলোকে আরও একটু বেশি করে দেখলে হয়ত ভালো হতে পারত। তবে নবীন পরিচালক মেধেকরের ছবিটি মিনি, তাঁর সম্পর্ক ও বায়োস্কোপওয়ালার খোঁজকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছে।
সিনেমায় বাবা-মেয়ের সম্পর্ক দেখানো হলেও 'বায়োস্কোপওয়ালা'-য় আরও একটা জিনিস দেখানো হয়েছে সেটা হল মানুষের গল্প বলার ক্ষমতা। কীভাবে বিভিন্ন মধুর স্মৃতি দিয়ে গল্প বানিয়ে মানুষ তাঁর জীবনের দুঃখগুলো বা অভাবকে ভুলে থাকতে চেষ্টা করে। স্মৃতি মানুষকে হাসায় আবার কাঁদায়ও। আর সুনীল দোষীর প্রযোজিত এই ছবিতে কী ভাবে স্মৃর্তি মানুষকে বাঁচিয়ে রাখে সেটাই উঠে এসেছে।
লেখাটি ইংরেজিতে পড়ুন