সভ্যতা তৈরি করেছে মানুষ, ধ্বংসও করেছে, পুনরুদ্ধার করেছেন জ্ঞানীরা
দৈনন্দিন জীবনের যে সমস্ত শৈল্পিক চিহ্ন থাকে, তা থেকেই আমরা সভ্যতার পরিচয় পাই
- Total Shares
মানুষের মধ্যে একটা জাগরণ আসুক, যে জাগরণের মধ্য দিয়ে তাদের নিজস্ব শিল্পচেতনা সংস্কৃতি চেতনা, আর মানবিক চেতনা আরও আরও বিকশিত হোক। এ বিরাট বিশ্বব্রহ্মাণ্ড ও প্রকৃতির স্রষ্টা যিনি, তিনি কিন্তু মানব সভ্যতা তৈরি করেননি। মানুষ এই সভ্যতার কারিগর। মানুষই আবার সভ্যতাকে যুগে যুগে ধ্বংস করেছে, গড়ে উঠেছে নতুন সভ্যতা। কিন্তু কিছু মহামানব, কিছু জ্ঞানী ও সৃষ্টিশীল মানুষের হাত ধরে সেই সভ্যতা পুনরুদ্ধারও হয়েছে।
সভ্য মানুষের বড় দায়িত্ব প্রকৃতিকে সংরক্ষণ করা। যে প্রকৃতি আমাদের জীবনধারণের প্রায় সবকিছুই দিয়ে থাকে, আমরা যেন সঠিক ভাবে তাকে সংরক্ষণ করতে পারি আর তারই পাশাপাশি সভ্যতার যে ঐতিহ্য, সভ্যতার যে পরম্পরা, তা যেন মানবিকতার চেতনায় উপযুক্ত ভাবে সংরক্ষিত হয়। ইতিহাস এবং ঐতিহ্য থেকে সভ্যতার পরম্পরা গড়ে ওঠে। তাই ঐতিহ্যকে সংরক্ষণ করা সভ্য মানুষের বড় দায়িত্ব।
অসমে বিহু উত্সব
তারই পাশাপাশি দেখতে হবে, সভ্যতার উপাদান কী। সেই উপাদান খুঁজতে গেলে একদিকে যেমন থাকবে স্থাপত্যশৈলী অন্যদিকে তেমন শিল্পকর্ম-- তা ভাস্কর্ষ হোক বা ছবি হোক। দৈনন্দিন জীবনের যে সমস্ত শৈল্পিক চিহ্ন থাকে, তা থেকেই আমরা সভ্যতার পরিচয় পাই। তাই এই বৈচিত্র্যময় রঙিন পৃথিবীতে সৃষ্টিতে, সংস্কৃতিতে পারস্পরিক ভালোবাসায় স্বজন সম্পর্কে আমরা যদি মিলেমিশে থাকতে পারি, যেখানে হানাহানি থাকবে না, মানুষের নিজস্ব স্বাধীনতা পৃথিবীকে ভালোবাসার স্বাধীনতা সম্পূ্র্ণ ভাবে থাকবে। ধর্মবিশ্বাস, নিজ নিজ ধর্ম পালন করতে পারবে, কোনও মানুষে মানুষে বিভেদ থাকবে না। গণতন্ত্র ও রাজনীতি সভ্যতাকে রক্ষা করার স্বার্থে নিজ নিজ আচরণে মানুষের কল্যাণের স্বার্থে প্রয়োগ হবে। সেখানে ধর্মকে হাতিয়ার করে মানুষের দুর্বলতা আর অশিক্ষাকে হাতিয়ার করে প্রভুত্বকে প্রতিষ্ঠা করে ক্ষমতার লোভে অন্ধ হয়ে যাঁরা মানুষে মানুষে বিভেদ করার চেষ্টা করছেন, বা সেই পথে ক্ষমতায় থাকার কল্পনা করছেন, তাঁরা কিন্তু আধুনিক সভ্যতার ক্ষেত্রে সবচেয়ে আশঙ্কার কারণ।
মানুষ সচেতন হোন, কারণ ভালোবাসার শক্তি, মানবতার শক্তি, সমস্ত অশুভ শক্তিকে দূর করে দিতে পারে। একদিকে যখন বাংলায় নতুন বছরের সূচনা হচ্ছে, অন্য দিকে উত্তরে পঞ্জাবীরা পালন করছেন বৈশাখের উৎসব। উত্তরপূর্বে অসম-- সেখানে পালিত হতে চলেছে বিহু উৎসব। এই বর্ণময় ভারতবর্ষে নানা ভাবে পালিত হয় নতুন দিন। যেন নব জাগরণের এক উন্মেষ।
তাই আমরা যেন সেই স্বপ্নে বিভোর থাকি, রবীন্দ্রনাথের ভাষায়,
এসো হে আর্য, এসো অনার্য, হিন্দু-মুসলমান।
এসো এসো আজ তুমি ইংরাজ, এসো এসো খৃষ্টান।
এসো ব্রাহ্মণ, শুচি করি মন ধরো হাত সবাকার।
এসো হে পতিত, হোক অপনীত সব অপমানভার।
মার অভিষেকে এসো এসো ত্বরা, মঙ্গলঘট হয়নি
যে ভরা সবার-পরশে-পবিত্র-করা তীর্থনীরে—
আজি ভারতের মহামানবের সাগরতীরে॥