উত্থান-পতনের মধ্যেই নির্ভীক হয়েছে বাংলা ছবি
চলচ্চিত্র মাত্রই শিল্প, তা হলে আলাদা করে আর্টফিল্ম কেন!
- Total Shares
পেরিয়ে আসা শতকের শেষ দু’টি দশকে উল্লেখ করার মতো বাংলা ছবির তালিকা হয়তো একটু লম্বা। কিন্তু সামগ্রিক ভাবে এ রাজ্যের চলচ্চিত্র শিল্প ওই সময়ে টানাপোড়েনের ভিতর দিয়েই রাস্তা পেরিয়েছে। আশি ও নব্বইয়ের দশকে বাংলা সিনেমা শিল্পের অর্থনীতি বা বাজার টিকেছিল মাত্র কয়েকটি বাণিজ্যিক ছবির সাফল্যের খাতিরে।
দর্শকের ভিড় উপচে পড়েছিল বেদের মেয়ে জোসনা ছবিতে। (ছবি: ইউটিউব স্ক্রিনগ্র্যাব)
নব্বইয়ের দশকে সেই বাজারটাই আবার লক্ষণীয় ভাবে নির্ভর হয়ে পড়েছিল প্রতিবেশী রাষ্ট্র বাংলাদেশের উপর। যদিও সে দেশের ছবির মান সেই সময়ে অত্যন্ত খারাপ ছিল। মুক্তিযুদ্ধের রেশ কাটিয়ে উঠে সদ্য স্বাধীনতা পাওয়া একটি দেশ তখন ঘর গোছাতে ব্যস্ত। এ ছাড়াও নানাবিধ কারণ আছে। কিন্তু এখানে সেই আলোচনার অবকাশ নেই। আমাদের আলোচ্য বিষয় সাম্প্রতিক বাংলা ছবি।
টিকে থাকার রসদ
পাকিস্তানের সেনাশাসনের প্রভাব কাটিয়ে ওঠা বাংলাদেশের আশি ও নব্বইয়ের দশকের ব্যবসা-সফল ছবি তা স্বত্ত্বেও কলকাতার বাংলা সিনেমা দুনিয়ায় প্রভাব বিস্তার করে। গুণ ও মানের বিচারে কলকাতার বাংলা সিনেমার ধারে কাছে পৌঁছায় না যে সব ছবি, সেগুলি বাংলাদেশে ব্যবসায়িক ভাবে সফল হওয়ায় টলিউডের ব্যবসাভিত্তিক সিনেমা পরিচালকদের ভাবিয়ে তোলে। প্রথমদিকে কপি ও পেস্ট – মানে টুকলি –পরবর্তী সময়ে গালভরা নাম রিমেক শুরু হয়। বেশ কয়েকটি শুটিং-ফ্লোরে আবার লাইট-সাউন্ড-ক্যামেরার ব্যস্ততা লক্ষ্য করা যায়।
দর্শক টেনেছিল বাবা কেন চাকর ছবিও। (ছবি: ইউটিউব স্ক্রিনগ্র্যাব)
শহর ও গঞ্জের ধুঁকতে থাকা প্রেক্ষাগৃহগুলির সামনে ফের দর্শকদের ভিড় উপচে পড়ে ‘বেদের মেয়ে জোসনা’, ‘নয়নের আলো’, ‘প্রেমের প্রতিদান’, ‘বাবা কেন চাকর’ – এমন আরও অনেক ছবি দেখতে। দু’দেশের আপোশে তৈরি এ রকম বহু ছবি থেকে টালিগঞ্জের বাংলা সিনেমা বেঁচে থাকার মতো অক্সিজেন পেয়ে যায় ওই সময়।
ফিল্মের আর্ট কমার্স
মন্দা কেটে গেলে সাময়িক হলেও একটু অন্য অবস্থা লক্ষ্য করা যায়। বাংলা সিনেমার দুনিয়ায় আচমকা নয়, ধীরে ধীরেই সেরকম একটা পরিস্থিতি তৈরি হয়ে যায় ওই সময়। কেবলমাত্র বাংলা সিনেমার দুনিয়া নয়, কলকাতা ও শহরতলির সিনেমা দর্শকদের বলা কথায়, শোনায় এবং দেখায় আর্ট ফিল্ম এবং কমার্সিয়াল – এই দুই ধারা লক্ষ্য করা যায়।
আসলে বাংলা সিনেমা তখন প্রায় ঢাকঢোল পিটিয়ে দু’টি ধারার চর্চা শুরু করেছিল। প্রথমটি আর্টফিল্ম বা বিষয়ভিত্তিক ধারার চলচ্চিত্র আর দ্বিতীয়টি বাণিজ্যিক ধারার। সিনেমা তো একটি আর্টই। আর্ট বাদ দিয়ে কি কোনও আর্ট মাধ্যম হয়! আমরা কি তবে সিনেমাকে আর্টের বাইরে কিছু বলে ভাবতাম? অবশ্য ভাবাটাই স্বাভাবিক, কারণ বাংলা সিনেমায় আর্ট তো সত্যি দুর্লভ। যাই হোক প্রযোজক-পরিচালক প্রমুখের পাশাপাশি দর্শককেও এই দু’টি ধারায় ভাগ করা ফেলা হল। কেউ দেখলেন বাণিজ্যিক ছবি, কেউবা আর্ট বা বিষয়ভিত্তিক ছবি। হয়তো নির্মাতারাও সেই সময় নির্দিষ্ট শ্রেণির কথা মাথায় রেখেই ছবি নির্মাণ করছিলেন।
রিমেক না টুকলি
যদি বাণিজ্যিক ছবির প্রসঙ্গকে সামনে আনা হয় তা হলেও দেখা যাবে গত শতাব্দীর পঞ্চাশ থেকে সত্তর দশকের তুলনায় পরিস্থিতি ভয়াবহ খারাপ হয়েছিল আশি নব্বইয়ের দশকে। লগ্নিকৃত টাকা ফেরত পেতে হিমশিম খেতে হয়েছে। কারণ হিসাবে প্রাথমিক অবস্থায় অনেকেই রিমেক ছবি নির্মাণকে দায়ী করছেন। প্রথম দিকে দক্ষিণ ভারতের ছবি থেকে বাংলা রিমেক ছবি মোটামুটি চললেও এক সময় দর্শক মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন।
টাকা খরচ করে, সময় নষ্ট করে ওই ধরনের ছবি দেখতে একেবারেই উৎসাহী নন দর্শকরা। তাঁরা সব সময়েই নতুন কিছু চান। তা ছাড়া তামিল, তেলুগু ছবির অনেক বাংলা ডাবিংয়ের ডিভিডি তখন সস্তায় পাওয়া যেত। দেখতে চাইলে ঘরে বসে আরাম করে তা দেখতে পারতেন। এর ফলে এই শতকের গোড়া থেকেই কলকাতার ৭০ ভাগ বাংলা ছবি ব্যবসায়িক ভাবে লোকসানের মুখে পড়ে। অনেক নির্মাতা রিমেকের ব্যাপার-স্যাপার এবং ক্ষতিকর দিকটা অনুধাবন করতে পেরেই সেখান থেকে সরে আসেন।
বিবিধ রসায়ন
হালে পূজা, ঈদ ইত্যাদি উপলক্ষ করে যে সব ছবিগুলি মুক্তি পেতে শুরু করল; সেগুলি মুক্তির আগে প্রচারে নানা আয়োজন যোগ হল ঠিকই, কিন্তু শেষমেশ সেগুলিও লগ্নিকৃত টাকা ফেরত আনতে পারেনি। প্রশ্ন; যদি পূজো আর ঈদ কিংবা উপলক্ষ্য ছাড়া ছবি ব্যবসা করতে না পারে, তা হলে সারা বছর ছবি বানানোর কী দরকার? বাংলা ছবিতে মুম্বাইয়ের অভিনেতা অভিনেত্রী দিয়ে বিকৃত বাংলা বলিয়ে অভিনয় করিয়ে ছবি হিট করানোর প্রচেষ্টা অনেক আগেও হয়েছে, ফের একবার মরা গাঙে বান আনতে অনেকে চেষ্টা করলেন কিন্তু এবারও তেমন সাড়া মিলল না।
অনীক দত্তর ভবিষ্যতের ভূত ছবির পোস্টার। (ছবি সৌজন্য: ইন্ডিয়া টুডে)
শেষ পর্যন্ত কয়েকজন অবাংলাভাষী পরিচালককে বাংলায় নিয়ে এসে ছবি তৈরি শুরু হল। এক আধ জন দু’একটি ছবিতে সামান্য সফল হলেও প্রযোজক বুঝলেন এটা কোনও ফর্মুলা হতে পারে না যা থেকে সাফল্য আসতে পারে।
অবিবেচকের প্রশ্ন
হালের বাংলা ছবি যে কি অবস্থায়, তা একটি ঘটনা দিয়ে বলার চেষ্টা করছি। বলে রাখা ভালো, এই ঘটনা কেবল যে ব্যক্তিগত তাই নয়, এ ঘটনা তেমন ভাবে কিছু প্রমাণও করে না, কিন্তু একটা পরিস্থিতি বুঝতে সাহায্য করে। তাই সেই অভিজ্ঞতার কথা বলার লোভ সংবরণ করতে পারলাম না।
শিয়ালদহ এলাকায় একটি প্রেক্ষাগৃহে ছবি দেখতে গিয়েছি। ছবির নাম ‘জিও পাগলা’। সবমিলিয়ে দর্শক আমাকে নিয়ে ৩০ থেকে ৩৫ জন। আমি রীতিমতো বিষ্ময় প্রকাশ করেছিলাম এই অবস্থা দেখে! কারণ এ ভাবে চললে বিদ্যুতের বিল ওঠানো সম্ভব নয়। প্রেক্ষাগৃহ বন্ধ তো হবেই বাংলা সিনেমা শিল্পে লাল লণ্ঠন ঝুলবে।
সারা পশ্চিমবঙ্গে দেড় হাজার সিনেমা হলের মধ্যে এখন অবশিষ্ট আছে শ’দুয়েক মতো বা তার চেয়েও কম। আগামী পাঁচ বছর পর এই সংখ্যা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে?
ভাবনা শূন্য আধার
এই বাংলার অনেক চিত্রতারকা বিধায়ক এবং সাংসদ পদ আলো করে রেখেছেন। অনেকেই প্রশ্ন করেন; তাঁরা কেউ একজন কোনওদিন ভুল করেও কি বাংলা ছবির দৈন্যদশা কিংবা একটির পর একটি প্রেক্ষাগৃহ ভ্যানিস হয়ে যাওয়ার কথা বিধানসভায় বা লোকসভায় উত্থাপন করেছেন? করলে তাঁদের জাত যেত কিনা কারও জানা নেই, তবে প্রায় একই সুরে প্রত্যেকেই বলে থাকেন, সভাস্থলে সবার কাছে বক্তব্য গ্রহণযোগ্য করতে গেলে বিষয় এবং ভাষার ওপর দখল থাকা দরকার।
অনেকে আজ একথাও বলছেন, বাংলা সিনেমা-শিল্পের প্রায় সব তারকা, কলাকুশলীকেই রাজ্যের শাসক দলের নানা অনুষ্ঠান, মিটিং এমনকি মিছিলেও দেখা যায়। তাঁদের মধ্যে অনেকেই মন্ত্রী এমনকি মুখ্যমন্ত্রীরও খুব প্রিয় পাত্র। তাঁদের কেউ একজনও কি কখনও কোনওদিন বাংলা ছবির হাল, ঐতিহ্যপূর্ণ প্রেক্ষাগৃহগুলি বন্ধ হয়ে যাওয়া, হল ভেঙে মল বা বহুতল নির্মাণ- এ সব কথা উত্থাপন করা যায় কি না ভেবে দেখেছেন?
অনেক শিল্পীই মুখ্যমন্ত্রীর ঘনিষ্ট, তাঁদের মধ্যে অনেকে আবার সাংসদ-বিধায়ক। (ফাইল ছবি: পিটিআই)
না। কেন ভাববেন? বাংলা ছবি বলেই ভাবা যায় না। কারণ বাংলা ছবি বিষয়টাই রয়েছে এমনই একটি আধারে যেখানে ভাবনা ছাড়া আর সব কিছুরই অবসর আছে।
আর্ট-এর সাফল্য
ব্যবসায়িক সিনেমা বলে যে সব ছবি দেগে দেওয়া হয়েছে সেগুলি সরিয়ে এবার আর্ট ফিল্ম বা বিষয়ভিত্তিক ছবির প্রসঙ্গে আসা যাক।
এক্ষেত্রে তুলনামূলকভাবে কিন্তু হালের কমার্শিয়াল ছবিগুলির থেকে সেই ‘আর্ট’ ছবিগুলি কিছুটা ভালো অবস্থানেই রয়েছে। আমি ওই ছবিগুলিকে বলব কলকাতার ছবি বা শহুরে ছবি। কারণ শহুরে দর্শকের কথা মাথায় রেখেই ওই ছবিগুলি তৈরি হয় এবং ছবিগুলি শহুরে দর্শকরাই দেখেন।
ঋতুপর্ণ ঘোষ-এর ১৯ এপ্রিল থেকে শুরু করে একেবারে সাম্প্রতিক ছবিটিও এই পর্যায়ভুক্ত। তবে ঋতুপর্ণ ঘোষের মেধার সঙ্গে কলকাতা বা শহুরে ছবি করিয়েদের মেধার যে বিস্তর ফারাক রয়েছে সে কথা এখন সবাই বলছেন।
খাদ ছবির একটি দৃশ্য। (ছবি: ইউটিউব স্ক্রিনগ্র্যাব)
তবে সব শহুরে ছবিই যে শহুরে মানুষ গ্রহণ করেছেন তা অবশ্য নয়। এর মাঝে কোনও ছবি কম ব্যবসা করেছে। কোনও ছবি ব্যবসা করতে পারেনি। কোনও ছবির বাজেট খুব বেশি না হওয়ায় শহরের সিনেপ্লেক্সগুলোতে মুক্তির মাধ্যমে টাকা উঠিয়ে নেওয়া সম্ভব হচ্ছে। আর স্পন্সর, টেলিভিশন স্বত্ত্ব তো রয়েছেই।
নানা রঙের মিশেল
শহুরে ছবির ক্ষেত্রে একটি বিষয় বিশেষভাবে লক্ষ্যণীয়, এই ধারার ছবিতে অধিকাংশ সময়েই নির্মাতারা যৌনতাকে তাঁদের ছবিতে টেনে আনেন। তারা তো আসলে ছবিতে গল্প বলেন, তো তারা এমন ভাবে ছবির গল্প সাজান যেখানে যৌনতাকে অত্যন্ত জরুরি করে তোলা যায়। ফলে যৌনতা হয়ে যায় ছবির গয়নাগাটি।
গল্প বলার ক্ষেত্রে তারা বেশ কিছুটা কৌশল অবলম্বন করেন। গল্প হলেও অনেক মাপজোক করেই মধ্যবিত্তের সাধারণ চাহিদাকে ভীষণ জরুরী করে তোলা, বা মামুলি কথাকে গভীরতা দেওয়া এসবই মুলত ঘটে থাকে। একটা গল্প সমান্তরালভাবে চলতে থাকে। অন্যদিক থেকে এসে যায় আরেক ঘটনা। সেখানে কয়েকটি যৌনদৃশ্য দর্শকদের উত্তেজনার সৃষ্টি করে। এতে পরিচালকরা বেশ সফল হন।
তবে ছবিতে সবসময়ে যে একটা মৌলিক গল্প থাকে তাও কিন্তু নয়। বহু সময়েই বহু ছবির বহু গল্প, ঘটনা এবং দৃশ্যের বিরুদ্ধে বিভিন্ন দেশের ছবি থেকে টুকে দেওয়ার অভিযোগ তুলেছেন দর্শকরাই।
হিন্দির সঙ্গে টক্কর
এ কথা ঠিকই যে বাংলা ছবিকে প্রতিনিয়ত বলিউডের ছবির সঙ্গে রীতিমতো লড়াই করতে হয়। এমনটা তো হামেশাই হয় বাংলা ছবির সঙ্গে একইদিনে বিগ বাজেটের হিন্দি ছবি মুক্তি পেল। সেক্ষেত্রে বাংলা ছবির থেকে বেশ কয়েক ধাপ এগিয়ে যায় হিন্দি ছবি। কারণ বহু আগে থেকে হিন্দি ছবিগুলি জাতীয় স্তরে প্রচার পেয়ে দর্শক মহলে এক ধরনের আগ্রহ তৈরি করে ফেলে। দর্শক মনে সেই হিন্দি ছবিটি প্রচারের কারণেই যে ধরনের উন্মাদনা তৈরি করতে পারে বাংলা অধিকাংশ ছবি তা পারে না।
এতে লোকসানের মুখে পড়তে হয় বাংলা ছবিকে। এ সবের মাঝে পড়ে প্রায়সই বাংলা সিনেমার টিকে থাকাটা খুব কষ্টসাধ্য ব্যাপার হয়ে ওঠে। হিন্দি ভাষার দাপটে বাংলা ছবির কোণঠাসা অবস্থা কাঙ্ক্ষিত নয় মোটেও। সেই কারণেই বাংলা সিনেমাকে তার নিজের ক্ষমতা এবং যোগ্যতা থেকেই ঘুরে দাঁড়াতে হয়।
এই লড়াইয়ে এখন বাংলা সিনেমা যথেষ্ট সাফল্য পেয়েছে। তবে চলচ্চিত্রের নিজস্ব ভাষা তৈরির ক্ষেত্রে বাংলা সিনেমাকে মৌলিক ভাবনায় প্রাধান্য দিতে হবে। টোকাটুকি বা অন্যের ভাবনা থেকে বেরিয়ে এসে নিজস্ব সংস্কৃতি ও স্বতন্ত্র অবস্থানে ফিরতে হবে।
স্বতন্ত্র চিন্তা
কমার্সিয়াল, আর্ট, মেইন-স্ট্রিম, প্যারালাল, ইনডিপেন্ডেন্ট, অলটারনেটিভ – এ জাতীয় অভিধা থেকে বাংলা ছবির মুক্তি পাওয়া যেমন দরকার তেমনই অভিধা সংক্রান্ত যত কিছু বিরোধ সেসব ঘুচিয়েও বাংলা সিনেমার সুবর্ণ যুগে ফেরাটা অনেক বেশী জরুরি। বাংলার প্রকৃত সিনেমারূপ তো তেমন সুদূরবর্তী ঘটনা নয়।
সাম্প্রতিক অনেক বাংলা ছবিতেই সাবলীল বাংলা চলচ্চিত্ররূপ যেমন লক্ষ্য করা যাচ্ছে, পাশাপাশি নির্ভীক, নির্মম ভাবেও বলার যে একটা চেষ্টা সেটা সামান্য হলেও টের পাওয়া যাচ্ছে। তার চেয়েও লক্ষনীয় বিষয় বাংলা ছবি সবার জন্য সিনেমা হয়ে উঠতে চাইছে।
হাওয়া ঘুরছে
সত্যজিৎ, ঋত্বিক, মৃণাল পরবর্তী সময়ে বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত, অপর্ণা সেন, গৌতম ঘোষ, উৎপলেন্দু চক্রবর্তী, এরপর ঋতুপর্ণ ঘোষ, অঞ্জন দাশ, অনিরুদ্ধ রায়চৌধুরী, কৌশিক গাঙ্গুলি, সুমন মুখোপাধ্যায়, সৃজিত মুখোপাধ্যায়, অনীক দত্ত মেধার ছাপ যুক্ত সিনেমাটিক প্রকাশ ভঙ্গিমাতেই সৃষ্টি করেছেন নতুনত্বের জোয়ার। বাংলা সিনেমা এখন অনেক বেশি সাবলীল ও নির্ভীক।
ভূতের ভবিষ্যৎ ছবির একটি দৃশ্য। (ছবি: ইউটিউব স্ক্রিনগ্র্যাব)
ছকবাঁধা বাংলা ছবির প্রথাগত গল্প বা কাহিনি কি একেবারেই নেই? সেখান থেকে বেরিয়ে এসে বাংলা সিনেমা এখন যথেষ্ট স্পষ্টবাদী। বাংলা সিনেমার কাহিনি-বলয়ে এখন আনাগোনা করে মধ্যবিত্তের চেনা জগতের অচেনা মানুষজন। মধ্যবিত্ত বাঙালির আবেগ, অনুভব, কল্পনা নয় – সে সবের অনুসঙ্গই এই সময়ের বাংলা সিনেমার উপজীব্য। সিনেমা নির্মাণের শৈলীতেও পুরনো রীতি থেকে বেরিয়ে এসে নতুন কিছু করার ইচ্ছে যে নতুন সিনেমা করিয়েদের রয়েছে সেটা বোঝা যায়।
প্রায় প্রতিদিনই বিচিত্র বিষয়, তার থেকেও বৈচিত্র্যময় আঙ্গিকে সিনেমা বানানোর চেষ্টা চলছে। কমেডি ধাঁচের হালকা রসবোধ থেকে ভীষণ সিরিয়াস, নিরীক্ষামূলক থেকে প্রাপ্ত মনস্কতা। তবে গত কয়েকবছরের নানাভাবে আলোচিত সিনেমাগুলোর বিশেষত্ব এক ধরনের নিজস্বতায় ঘুরপাক খাচ্ছে যেমন পাশাপাশি বাংলা ছবি এই সময়েও একেবারেই রাজনৈতিক চিন্তাশূন্য।
তৃতীয় পর্ব পড়তে ক্লিক করুন: আধুনিক বাংলা ছবির যুগে ঋতুপর্ণ ঘোষ ছিলেন মরুদ্যানের মতোই