বলিউডের নতুন মুখ ভরত কুমারকে কেন এত পছন্দ বক্সঅফিসের
অভিনয় জীবনের অনেকটা সময় তিনি 'খিলাড়ি'-র ভূমিকায় অভিনয় করেছেন
- Total Shares
অনুরাগ সিংয়ের পরবর্তী ছবি 'কেশরী'-তে সারাগ্রাহীর যুদ্ধকে বিরাট আকারে দেখানো হয়েছে। যে যুদ্ধর ঘটনাকে কেন্দ্র করে ছবিটি বানানো হয়েছে সেই যুদ্ধটি বাস্তবে ১৮৬৭ সালে হয়েছিল, সংখ্যার দিক থেকে বিচার করলে দেখা যাবে যে সেই যুদ্ধে মোট ২১ জন শিখ সৈন্য প্রায় ১০,০০০ আফগানের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলেন।
যুদ্ধে শিখদের প্রধান ছিলেন হাবিলদার ইশার সিংহ। তিনি এবং সেই যুদ্ধের অন্য সৈন্যদের ইন্ডিয়ান অর্ডার অফ মেরিট সম্মানে ভূষিত করা হয়েছিল। ইংরেজ শাসনকালে যুদ্ধের সময় সৈন্যদের সাহসিকতার জন্য যে মরনোত্তর সম্মানটি দেওয়া হতো তার মধ্যে এটিই ছিল সর্বোচ্চ।
গল্প নির্বাচনে কোনও ঝুঁকি নেওয়া হয়নি
ছবিটি পরের বছর মুক্তি পাবে। ছবিতে ইশার সিংহের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন অক্ষয় কুমার। যদি চিত্রনাট্য, পরিচালনা এবং অভিনয় খুব খারাপ না হয় তাহলে এমন একটি গল্প নির্বাচন করা হয়েছে যা কখনও মার খাবে না। গল্প নির্বাচনের ক্ষেত্রে কোনও ঝুঁকি নেওয়া হয়নি।
'রুস্তম' ছবিতে অক্ষয় কুমার
সম্প্রতি কুমার যে ধরণের ছবিতে অভিনয় করেছেন তা থেকে বেশ পরিষ্কার যে উনি বাস্তবধর্মী ছবিতে অভিনয় করতে চান। অভিনয় জীবনের বেশ অনেকটা সময় তিনি 'খিলাড়ি'-র ভূমিকায় অভিনয় করলেও এ যুগের স্বদেশপ্রেমী হিরো বলতে আমরা তাঁকেই বুঝি। কাল্পনিক বা ভিন্নধর্মী ছবিগুলো তিনজন খানকে কেন্দ্র করে বানান হয়, তবে ইতিহাস বলছে যে তাঁর ছবিগুলো খুব একটা নজর না কাড়লেও বাণিজ্যিক ভাবে সফল।
বহু সফল ছবির পেছনে এই মানুষটি রয়েছেন। ২০১৮ সালে ফোর্বস একটি তালিকা প্রকাশ করেছিল সেখানে সর্বোচ্চ পারিশ্রমিক পাওয়া বিশ্বের অভিনেতাদের মধ্যে তাঁর নাম ছিল সপ্তমে। তাহলে ভারতীয় সিনেমা জগতে খানদের পাশাপাশি তিনিও সর্বোচ্চ পারিশ্রমিক পান। তবে আশ্চর্যের বিষয়টি হল তাঁর কোনও ছবি 'দঙ্গল' ছবিটির মতো সমস্ত রেকর্ড ভেঙে ব্লকবাস্টার হিট হয়ে উঠতে পারেনি। তবে তিনিও অত্যন্ত সফল সব ছবি করেছেন যা তাঁকে সাফল্য এনে দিয়েছে। তিনি অত্যন্ত বিচক্ষণভাবে ছবি নির্বাচন করেন।
সম্প্রতি তাঁর 'গোল্ড' ছবিটি মুক্তি পেয়েছে, ছবিটিতে কয়েকটি ত্রুটিবিচ্যুতি রয়েছে। স্বাধীন ভারতের প্রথম স্বর্ণপদক জয়কে কেন্দ্র করে ছবির চিত্রনাট্যটি তৈরি হয়েছে। ১৯৪৮-এর লন্ডন অলিম্পিকে যে বার স্বাধীন ভারত প্রথমবার স্বর্ণপদক জিতে ছিল সেখানে ভারতীয়দের প্রধান লক্ষই ছিল সর্বকালের জয় গ্রেট ব্রিটেনকে হারান। খুব সাদামাঠা একটা চিত্রনাট্য। ছবিটিতে দলের ম্যানেজারের (কুমার) উপর অনেক বেশি আলোকপাত করা হয়েছে এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ দিক যেমন যাঁদের জন্য এবং যে বিষয়গুলির জন্য ভারতের স্বর্ণপদক জয় সম্ভব হয়েছে সেগুলির উপর তেমন একটা জোর দেওয়া হয়নি। ঠিক একই ভাবে ছবিটিতে এই ধরণের নানা ত্রুটি থাকা সত্ত্বেও ছবিটি সফল হয়েছে।
'গোল্ড'-এর সাফল্যে একটা বিষয় বেশ পরিষ্কার যে দর্শক কুমারের রূপান্তরকে মেনে নিয়েছে। অরুণাচলম মুরুগানন্তমের জীবনী থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে 'প্যাডম্যান' ছবিটি বানানো হয়েছে। ছবিতে কুমার এমন একজন ব্যক্তির চরিত্রে অভিনয় করেছেন যিনি মহিলাদের জন্য কম খরচে স্যানিটারি ন্যাপকিন তৈরি করেন। এমন একজন ব্যক্তি যিনি এ হেন একটি সামাজিক পরিবর্তন নিয়ে আসেন তাঁর চরিত্রে কুমারের অভিনয় সত্যি দর্শকের মন কেড়েছিল।
সম্প্রতি তিনি এমন একটি চরিত্র নির্বাচন করছেন যা থেকে পরিষ্কার যে তিনি অভিনেতা হিসেবে নিজেকে সম্পূর্ণভাবে রূপান্তর করতে চান। আবার 'টয়লেট: এক প্রেম কথা' ছবিতে উঠে এসেছে পরিছন্ন শৌচালয়ের প্রয়োজনীয়তার কথা।
ছবিতে নোটবন্দির পক্ষেও যেমন অনেক কথা বলা হয়েছে তেমনই ছবিতে লিঙ্গবৈষম্য, মহিলাদের শিক্ষা ও কুসংকারকে নিয়ে অনেক নীতি কথাও বলা হয়েছে।
তিনি ছবিতে এমন একজন ব্যক্তির ভূমিকায় অভিনয় করেছেন যিনি 'স্বচ্ছ ভারত অভিযান'-এর হয়ে প্রচার করেছেন। তবে ছবিটির দুর্বল চিত্রনাট্য এবং প্রধান বিষয়টির উপরে ঠিকঠাক আলোকপাত না করার শিকার ছবির অভিনেতা অক্ষয় কুমারকে হতে হয়েছে। বক্সঅফিসে ছবিটি সাফল্য বহু সিনেমা প্রেমিকে হলমুখী করেছে।
কঠিন পরিশ্রম
যদিও কুমার হিন্দি সিনেমা জগতে সবচেয়ে ভালো সুপারস্টার অভিনেতা নন তবে তিনি একজন অত্যন্ত পরিশ্রমী অভিনেতা বলে পরিচিত। 'রুস্তম' ছবির কোর্টরুম দৃশ্যে তাঁর সেই পরিশ্রম বেশ পরিষ্কার বোঝা যায়। কে এম নানাভটি মামলার উপর ভিত্তি করতে ছবিটি তৈরি করা হয়েছে। ছবিতে তিনি নৌবাহিনীর একজন উচ্চপদস্ত কমান্ডার, যিনি সবসময় সাদা ধোপদুরস্ত উর্দি পড়েন। তিনি তাঁর স্ত্রীর প্রেমিককে তিনবার গুলি করে হত্যা করেন।
'কেশরী'-তে অক্ষয় কুমার
একটি ত্রিকোণ প্রেমের গল্প যা ক্রমশ একটি দেশপ্রেমের কাহিনি হয়ে ওঠে, যেখানে ছবির প্রধান চরিত্র একটি দোষ করেও আইনের চোখে বেকসুর খালাস পায়। ঠিক মনে না হলেও উর্দি পরা এই ব্যক্তির কাহিনিটি বাণিজ্যিক ভাবে সফল হয়।
স্বদেশকে প্রাধান্য
১৯৯০ সালে উপসাগরীয় যুদ্ধের সময় ইরাক যখন কুয়েতকে আক্রমণ করে তখন কুয়েতের বহু ভারতীয় আটকে পড়েছিলেন। কুয়েতে আটকে পড়া ভারতীয়দের ওই দেশ থেকে নিজের দেশে ফিরে আসার বাস্তব ঘটনা অবলম্বনে বানানো হয়েছিল ছবি 'এয়ারলিফট'। ছবিতে কুমার একজন ব্যবসায়ীর ভূমিকায় অভিনয় করেন যিনি ওখানকার ভারতীয়দের নিজের দেশে ফিরিয়ে নিয়ে আসার প্রায় অসম্ভব কাজটিকে সম্ভব করেছিলেন।
চরিত্রটি কাল্পনিক ছিল বলে অনেকেই বলেন যে ওই সময়কার কোনও মানুষ যিনি সত্যি ওই পরিস্থিতে পড়েছিলেন তেমন কারও চরিত্রের উপর ভিত্তি করে ছবিটি বানান যেতে পারত। যাই হোক দর্শক এবং সমালোচকরা তাঁর চরিত্রটিকে বেশ পছন্দ করেছিল। 'কেশরী' ছবিতে তিনি এমন একজন ব্যক্তির ভূমিকায় অভিনয় করেছেন যাঁর কাছে তাঁর দেশ সবকিছুর উর্ধে। তাঁর সাম্প্রতিক সাফল্যের দিক থেকে বিচার করলে মনে হয় আগামী কয়েক মাস তাঁর জন্য কিছু খুশির খবর এনে দেবে।
(সৌজন্য মেল টুডে)
লেখাটি ইংরেজিতে পড়ুন