শিকাগোয় স্বামী বিবেকানন্দ কী বলেছিলেন? তাঁর বক্তৃতার বঙ্গানুবাদ
তিনি সম্বোধন করার পরে টানা দু্’মিনিট করতালি থামেইনি
- Total Shares
১১ সেপ্টেম্বর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চিকাগোয় বিশ্ব ধর্ম মহাসম্মেলনে বক্তৃতা করেন স্বামী বিবেকানন্দ। তাঁর সম্বোধনের পরেই টানা দু-মিনিট করতালি দিয়ে তাঁকে অভিবাদন জানান উপস্থিত শ্রোতৃমণ্ডলী। পরের দিন সকালেই সে দেশের সব সংবাদপত্রে স্বামী বিবেকানন্দের প্রশংসা।
শিকাগো ধর্মমহাসম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান (ফাইল চিত্র)
তাঁর সেই ঐতিহাসিক বক্তৃতার বাংলা তর্জমা ইন্ডিয়া টুডে গ্রুপের ডেইলিও বাংলার পাঠকদের জন্য।
আমেরিকাবাসী ভগিনী ও ভ্রাতাগণ,
আপনারা আমাকে যে আন্তরিক ও সাদর অভ্যর্থনা করেছেন তার উত্তর দিতে উঠে আমার হৃদয় অনির্বচনীয় আনন্দে উৎফুল্ল পরিপূর্ণ হয়ে গেছে। বিশ্বের প্রাচীনতম সন্ন্যাসী সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে সকলকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি; সব ধর্মের জননী যে ধর্ম, আমি সেই ধর্মের প্রতিনিধি হিসাবে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি; আমি জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে কোটি কোটি হিন্দু নরনারীর পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি। এই মঞ্চে দাঁড়িয়ে যাঁরা প্রাচ্যের প্রতিনিধিদের সম্পর্কে বলেছেন যে তাঁরা দূর দেশ থেকে এখানে এসে সহিষ্ণুতার ভাব প্রচারের গরিমা দাবি করতে পারেন, আমি তাঁদেরও ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি।
যে ধর্ম সারা বিশ্বকে সহিষ্ণুতা ও শাশ্বত ভাবে সকলকে গ্রহণ করার শিক্ষা দিয়ে এসেছে, সেই ধর্মের প্রতিনিধি হিসাবে আমি গর্বিত। চিরন্তন ভাবে আমরা যে সবকিছু গ্রহণ করেছি তা নয়, আমরা সব ধর্মমতকেই সত্য বলে স্বীকার করেছি। যে জাতি জগতের সব দেশ ও সব ধর্মের নিপীড়িত ও উদ্বাস্তু নরনারীকে আশ্রয় প্রদান করেছে, সেই ধর্মের প্রতিনিধি হিসাবে আমি গর্বিত।
রোম সাম্রাজ্যের নিপীড়নে যখন তাদের পবিত্র মন্দির ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছিল তখন সেই ইজরায়েলিদের একাংশ, যারা দক্ষিণ ভারতে এসেছিল, তাদের বুকে টেনে নিতে পারার কথা আপনাদের কাছে বলতে পরে আমি আজ গর্বিত। সকল জরাথ্রুস্টীকে যে ধর্ম একদিন আশ্রয় দিয়েছিল এবং আজও যাদের লাললপালন করে আসছে, সেই ধর্মাবলম্বী হওয়ার জন্য আমি গর্বিত। হে সতীর্থবৃন্দ, আমার বাল্যকালে যে শ্লোক বারে বারে বলেছি সেই শ্লোকটি আজ আমি আপনাদের শোনাব, যে শ্লোক প্রতি মুহূর্তে কোটি কোটি মানুষ স্মরণ করে থাকেন: নদী যখন বিভিন্ন ধারায় প্রবাহিত হয়ে সাগরে মিলিত হয় তখন সে তার নাম-রূপ সবই পরিহার করে, হে প্রভু, মানুষও সেই একই ভাবে বক্র বা সরল পথ ধরে তোমার সঙ্গে মিলিত হওয়ার দিকেই এগিয়ে চলে।
শিকাগোয় ধর্মমহাসম্মেলনে স্বামী বিবেকানন্দ (ফাইল চিত্র)
এখানে এই মহাসভায় যে মহৎ ব্যক্তিত্বের সমাবেশ হয়ে তা বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ সমাবেশের অন্যতম, এ এক অনন্য নজির; যে কথা গীতায় বর্ণনা করা আছে, এই সমাবেশ সারা বিশ্বের কাছে সেই কথাটিই তুলে ধরছে:
যেই আমার কাছে আসুক, যে রূপেই আমার কাছে আসুক, আমি তাকে গ্রহণ করব। সকলেই এগিয়ে চলেছে ভিন্ন পথ অবলম্বন করে, সেই সব পথই চলেছে আমার দিকে, যে পথ এসে মিলেছে আমাতেই। গোষ্ঠীতন্ত্র, গোঁড়ামি এবং তা থেকে উদ্ভুত ভয়ঙ্কর ধর্মান্ধতা দীর্ঘকালযাবৎ এই সুন্দর জগৎকে আচ্ছন্ন করে রেখেছে। সেই দানব এই বিশ্বকে পূর্ণ করেছে হিংসায়, প্রায়শই মানুষের শোনিতধারায় প্লাবিত করছে, সভ্যতাকে ধ্বংস করছে এবং সমগ্র জাতিকে হতাশাগ্রস্ত করে তুলেছে। যদি এই সব ভয়ানক রূপধারী দানবরা না থাকত, তা হলে এই জগৎ আরও অনেকটা এগিয়ে যেতে পারত। তবে তাদের সময় হয়ে এসেছে, আমি ঐকান্তিক ভাবে আশা করব, আজ সকালে যে ঘণ্টাধ্বনি দিয়ে এই মহাসভার সূচনা করা হয়েছে, তা যেন মৃত্যুঘণ্টা হয় সব ধরণের ধর্মান্ধতা, নিপীড়ন – তা সে অসির হোক বা কলমের এবং যে সকল মানুষ একই লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে চলেছে তাদের মধ্যেকার সমস্ত অসদ্ভাবের।
Swami Vivekananda spent more than a quarter of his life as a Sannyasin in the United States of America. M Venkaiah Naidu, Vice President of India, is in the U.S. to commemorate the 125th anniversary of Vivekananda’s address in Chicago to the Parliament of World Religions in 1893. pic.twitter.com/RQs2dwceaw
— U.S. Embassy India (@USAndIndia) September 10, 2018